ধরা যাক, একটি সুস্থ জীবনযাপন করা নারী হঠাৎ গর্ভধারণের পর রক্ত পরীক্ষায় জানতে পারলেন, তার থাইরয়েডে সমস্যা রয়েছে বা পরীক্ষার রিপোর্টে অসামঞ্জস্য রয়েছে। কিংবা, অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও কেউ যদি ওজন কমাতে না পারে বা অবিরত চুল পড়তে থাকে, এবং পরীক্ষায় দেখা যায় তার থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কম। এমন পরিস্থিতিতে, অনেকেই অপ্রত্যাশিতভাবে জানতে পারেন যে তাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে। দেশে অনেক মানুষই থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছেন, তবে এ সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। এই ভুল ধারণাগুলি ভাঙলেন ঢাকার গ্রিন লাইফ হাসপাতালের হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. তানজিনা হোসেন।
১. খাদ্যাভ্যাসের কারণে থাইরয়েডের সমস্যা হয়
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, থাইরয়েডের সমস্যার জন্য কোনো নির্দিষ্ট খাবার দায়ী নয়। কোনো নির্দিষ্ট খাবার এড়িয়ে চললে থাইরয়েডের সমস্যা প্রতিরোধও করা সম্ভব নয়। তবে, কিছু থাইরয়েড সমস্যা থাকলে রোগীদের কিছু খাবার পরিহার করতে বলা হয়, যেমন গলগণ্ডের ক্ষেত্রে ক্রসিফেরাস গোত্রের সবজি (ফুলকপি, বাঁধাকপি) খাওয়া এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কিন্তু, পরিমিত পরিমাণে এই খাবারগুলো খেলে কোনো সমস্যা হয় না। থাইরয়েড হরমোন তৈরি করতে আয়োডিন প্রয়োজন, তাই আয়োডিনের অভাবে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কমতে পারে, এবং এই কারণে লবণকে আয়োডিনসমৃদ্ধ করা হয়। তবে, আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার খেলে সব থাইরয়েড সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে এমনটি নয়।
২. নির্দিষ্ট খাবার খেলে থাইরয়েড সেরে যায়
থাইরয়েডের রোগ কোনো নির্দিষ্ট খাবার খেলে সারে না। অর্থাৎ, খাবারের সঙ্গে থাইরয়েডের প্রতিরোধ বা প্রতিকার কোনো বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক নেই। তবে, হাইপোথাইরয়েডিজম হলে ওজন বৃদ্ধি বা রক্তে ক্ষতিকর চর্বি বাড়তে পারে, তাই এমন একটি ডায়েট অনুসরণ করা উচিত, যাতে ওজন বা চর্বি বৃদ্ধি না পায়।
৩. থাইরয়েডের সমস্যা মানেই গলা ফোলা
থাইরয়েডের সমস্যা হলেই যে গলার সামনে ফোলা বা গোটার মতো কিছু থাকবে, তা নয়। থাইরয়েডের অনেক সমস্যা এমন হয়, যেখানে গলা ফুলে ওঠে না। কেবল কিছু নির্দিষ্ট সমস্যা থাকলে গলায় ফোলা বা গোটাজাতীয় কিছু দেখা যায়।
৪. উপসর্গ না থাকলে থাইরয়েডের চিকিৎসার প্রয়োজন নেই
অনেক সময় থাইরয়েড হরমোনের তারতম্যে শারীরিক কোনো সমস্যা দেখা না দিলেও, কিছু পরিচিত উপসর্গ যেমন ক্লান্তি, অবসাদ, ভুলে যাওয়া, ওজন বৃদ্ধি, চুল পড়া, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই চিকিৎসা নিতে চান না। তবে, চিকিৎসা না করালে পরে আরও গুরুতর জটিলতা হতে পারে। আবার, কিছু সময় হরমোনের মাত্রা বর্ডার লাইনে থাকলে চিকিৎসা প্রয়োজন নাও হতে পারে, তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
৫. গলগণ্ড হলে কেটে ফেলতে হবে
গলগণ্ড বা থাইরয়েড ফুলে গেলে তাকে সবার ক্ষেত্রে কেটে ফেলা উচিত, এমন ধারণা ভুল। বেশিরভাগ গলগণ্ডই নিরীহ এবং কোনো ক্ষতি করে না। সিঙ্গেল নডিউল বা একটি ছোট গোটা থাকলে, সেটা সন্দেহজনক হতে পারে, এবং এফএনএসি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হয়। আধুনিক আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে ক্যানসারের ঝুঁকি যাচাই করা সম্ভব। যদি ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে, তবে কেটে ফেলা উচিত, তবে এর মানে এই নয় যে, গলগণ্ডের জন্য সবসময় ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে বা তা কাটা উচিত।
এই ভুল ধারণাগুলির সমাধান জানিয়ে, থাইরয়েডের সমস্যা সম্পর্কে সঠিক ধারণা গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ, এবং যে কোনো শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।