“আমি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বন্দী: ফিলিস্তিনি ছাত্র মাহমুদ খলিল”

মাহমুদ খলিল, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, যাকে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার করেছেন, তিনি নিজেকে একটি রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, অভিবাসীদের এভাবে আটক রাখার প্রক্রিয়াটি ইসরায়েলের বিচারবহির্ভূত আটক ব্যবস্থার মতো।

মঙ্গলবার, স্থানীয় সময়, লুইজিয়ানার একটি আটককেন্দ্র থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে খলিল এই মন্তব্য করেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর এটি ছিল তার প্রথম প্রকাশ্যে দেওয়া বিবৃতি।

গত শনিবার, যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কর্মকর্তারা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবন থেকে খলিলকে গ্রেপ্তার করেন।

বিবৃতিতে, খলিল বলেন, “আমি একজন রাজনৈতিক বন্দী। লুইজিয়ানার শীতের সকালে ঘুম ভেঙে এখানে আটক মানুষের দেখেছি, যারা আইনের সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত।”

বর্তমানে, খলিল লুইজিয়ানার জেনা শহরের একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রে রয়েছেন এবং সেখানে তাকে বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, “এভাবে আটকে রাখা ইসরায়েলের কারাগারে বিনা বিচারে ফিলিস্তিনিদের আটকে রেখে নির্যাতনের মতোই। ফিলিস্তিনিরা তাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে চলেছে, এবং আমি তাদের বাইরে নই।”

খলিল বলেন, “এখানে যুক্তরাষ্ট্রের আটককেন্দ্রে কেউই তাদের অধিকার দাবি করতে পারে না।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি তার দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরেই কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যারা ফিলিস্তিন পন্থী আন্দোলনে জড়িত। খলিল ছিলেন সেই আন্দোলনের প্রথম শিকার। তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের শিক্ষার্থী। তাঁর গ্রিনকার্ড স্থায়ী হলেও, প্রশাসন জানায়, এটি বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে, একটি ফেডারেল বিচারক তার নিবার্সন প্রক্রিয়া স্থগিত করেছেন।

নিজের পরিবার ও বন্ধুদের মাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে, খলিল যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “গাজায় ইসরায়েলের হামলা আবার শুরু হওয়ায় আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে সমালোচনা করে বলেন, ‘আপনি যখন আপনার শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে নতজানু হন, তখন তা একধরনের বিকৃতি।'”

ট্রাম্প প্রশাসন একে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বিক্ষোভ বন্ধ করার জন্য বৈদেশিক শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, তবে মানবাধিকারকর্মী ও খলিলের আইনজীবীরা এই পদক্ষেপকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ এবং ফিলিস্তিন পন্থী মতামত দমনের চেষ্টা হিসেবে মন্তব্য করেছেন।

বিবৃতিতে, খলিল বলেন, “আমাকে গ্রেপ্তার করা একটি সরাসরি বাকস্বাধীনতার লঙ্ঘন। আমি কোনো অপরাধে জড়িত ছিলাম না। আমি শুধু চেয়েছিলাম ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ হোক।”

এছাড়া, খলিল জানায় যে, তাকে তার আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, নূর আবদাল্লার সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে আটক করার সময় কোনো পরোয়ানা দেখানো হয়নি, এবং তাকে নামহীন গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, গত বসন্তে তারা গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করেছিলেন, তা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন নস্যাৎ করে দিয়েছে এবং ইসরায়েল আবারও বর্বরতা শুরু করেছে।

আইনজীবীরা খলিলের গ্রেপ্তারের ঘটনাকে সংবিধানের লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং গত সপ্তাহে একটি সংশোধিত পিটিশন দাখিল করেছেন। তারা দাবি করেছেন, খলিল কোনো অপরাধে অভিযুক্ত নন এবং ট্রাম্প প্রশাসন তাঁকে প্রতিশোধ নিতে গ্রেপ্তার করেছে।

সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটসের সদস্য এবং খলিলের আইনজীবী বলেন, “এই গ্রেপ্তার ট্রাম্প প্রশাসনের ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ অভিযানের প্রথম পদক্ষেপ। ভবিষ্যতে আরও অনেককে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তবে তারা একজন নির্ভীক এবং নীতিনিষ্ঠ সংগঠককে গ্রেপ্তার করেছে, যিনি তার সম্প্রদায়ের মধ্যে অত্যন্ত ভালোবাসা ও বিশ্বাসের অধিকারী।”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।