ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রাম গতকাল রাত থেকে আনন্দে ভাসছে। সীমান্তঘেঁষা মন্দিরকোণা গ্রামের বৃদ্ধা এনতা মান্দার কাছে নিশ্চয়ই আজ ছুটে আসবে গ্রামবাসী, হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে। মারিয়া মান্দার অসাধারণ দূরপাল্লার শটটি কি ভোলার মতো? দুই বছর আগে যখন মারিয়া সাফ নারী ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গ্রামে ফিরেছিলেন, গ্রামের মানুষ রাস্তায় কলাগাছ পুঁতে তাকে সংবর্ধনা দিয়েছিল। এবারও কি সাফ জয়ের মুকুট নিয়ে মারিয়া ফিরে এলে গ্রাম উঠবে নৃত্যে-গীতে? ওই ফুটবলার মেয়েদের বিজয়ে গ্রামবাসী উল্লাসে মেতে উঠেছে।
কলসিন্দুর গ্রামের অদম্য মেয়েরা আবারও প্রমাণ করেছে তাদের দক্ষতা। এএফসি অনূর্ধ্ব–১৪ টুর্নামেন্টের আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দলে ১৮ সদস্যের মধ্যে ১০ জনই ছিল এই গ্রামের।
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের মৌতলায় রাজিয়া সুলতানার মা যখন কাজ করছিলেন, তখন প্রথম আলোর প্রতিবেদক তার বাড়িতে গিয়েছিলেন। রাজিয়া একজন কঠিন পরিশ্রমী, যে একসময় সন্তান জন্ম দিয়ে রক্তক্ষরণে মারা যান। তাঁর কবরের পাশে প্রাকৃতিক শোভা ছড়িয়ে আছে। জানতে ইচ্ছা করে, তাঁর মা কি জানেন রাজিয়ার বন্ধুরা আবারও সাফ জয় করেছে?
সেমিফাইনালে ভুটানের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেছে কলসিন্দুরের তহুরা। তহুরা এখন বাংলার ‘মেসি’ নামে পরিচিত। ২০১৫ সালে তার প্রথম বিদেশে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল ভয়াবহ, কিন্তু আজ সে সাফল্যের পথে।
প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কলসিন্দুরের মেয়েদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তারা জাতীয় দলে জায়গা পেয়ে গ্রামের গর্বে পরিণত হয়েছে। তাঁদের জয়ে গ্রামের অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়েছে—রাস্তা, বিদ্যুৎ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্নত হয়েছে।
ফুটবল নিষ্ঠুর খেলা, অনেক কিশোরী খেলছে, কিন্তু সব কজন জাতীয় দলে জায়গা পায় না। জাতীয় দলের সুযোগ না পাওয়া কাহিনিগুলি অশ্রুতে ভরে যায়।
বদলে যাওয়া বাংলাদেশে নতুন প্রজন্মের ফুটবলাররা সংগ্রামের মাধ্যমে একটি চ্যাম্পিয়ন দলের স্বপ্ন দেখে। কলসিন্দুরের মেয়েদের সেই একটিমাত্র আকাঙ্ক্ষা, ‘আমাদের বেশি করে খাবার দিন, বাকিটা আমরা বাড়ি নিয়ে যাব।’
অবশেষে, আমার দেশ কবে দারিদ্র্যমুক্তিতে চ্যাম্পিয়ন হবে?