যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর অবশেষে পৃথিবীতে ফিরছেন। তারা দীর্ঘ ৯ মাস ধরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস)-এ অবস্থান করেছিলেন। তাঁদের ফেরানোর জন্য গত শুক্রবার ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে একটি মিশন পাঠিয়েছে নাসা ও ইলন মাস্কের মহাকাশ প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স।
এই মিশনটির নাম রাখা হয়েছে ‘ক্রু-১০’। এতে নতুন চার নভোচারী পাঠানো হয়েছে, যারা আইএসএসে পৌঁছেছেন। এখন সুনিতা ও বুচের পৃথিবীতে ফেরার সময় এসেছে। তারা গত বছর জুনে আইএসএসে গিয়েছিলেন একটি আট দিনের মহাকাশ মিশনে। কিন্তু বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানে ত্রুটির কারণে তারা সেখানে আটকে যান।
নভোচারী সুনিতা এবং বুচ দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফেরার ব্যাপারে বেশ উত্তেজিত। এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন তারা, যেখানে তারা আইএসএস থেকে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন।
স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেট ব্যবহার করে ‘ক্রু-১০’ মিশন মহাকাশে পাঠানো হয়।
মহাকাশের স্মৃতি
সংবাদ সম্মেলনে সুনিতাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, মহাকাশে তার সবচেয়ে প্রিয় কোন বিষয়টি? তার উত্তর ছিল, “সবকিছু।” তিনি বলেন, “এটা আমার এবং বুচের তৃতীয় আইএসএস সফর। আমরা এখানে বিভিন্ন অংশ একত্র করতে সাহায্য করেছি এবং এটি পরিবর্তিত হতে দেখেছি। এখানে থাকা আমাদের একটি অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে—শুধু জানালার বাইরের দৃশ্যই নয়, সমস্যা সমাধানও শিখিয়েছে। আমি চাই না, এসব অনুপ্রেরণা এবং দৃষ্টিভঙ্গি হারিয়ে ফেলি, তাই যেভাবেই হোক, এগুলো স্মৃতিতে রাখব।”
ফিরে আসার অনিশ্চয়তা
সুনিতা জানান, তাদের ফিরে আসার দিনক্ষণ সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য জানানো হয়নি, যা তার জন্য সবচেয়ে কঠিন বিষয় ছিল। তিনি বলেন, “আমরা এখানে আছি, আমাদের একটি মিশন আছে, প্রতিদিন যা যা করতে হয়, তা করি। সবচেয়ে কঠিন বিষয়টি হলো, আমরা কখন ফিরব, তা জানাটা ছিল না। ওই অনিশ্চয়তাগুলোই সবচেয়ে কঠিন ছিল।”
‘ক্রু-১০’ মিশন
‘ক্রু-১০’ মিশনে চারজন নভোচারী আইএসএসে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩ মিনিটে মহাকাশযানটি কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে রওনা হয়। এতে রয়েছেন নাসার নভোচারী অ্যান ম্যাকক্লেইন, নিকোল আয়েরস, জাপান মহাকাশ সংস্থা জেএএক্সএর নভোচারী তাকুইয়া ওনিশি এবং রাশিয়ার রসকসমসের নভোচারী কিরিল পেসকভ।
শুক্রবার পৃথিবী ছাড়ার পর, শনিবার রাত ১২টা ৪ মিনিটে স্পেসএক্সের ‘ড্রাগন’ মহাকাশযানটি আইএসএসে পৌঁছায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও রাশিয়ার নভোচারীরা আইএসএসে প্রবেশ করেন। তারা সুনিতা ও বুচের কাছ থেকে আইএসএসের বিভিন্ন বিষয় শিখে কয়েক দিন সেখানে অবস্থান করবেন।
পরবর্তীতে, সুনিতা ও বুচ স্পেসএক্সের মহাকাশযানের ক্যাপসুলে প্রবেশ করবেন। তাদের সঙ্গে আরো দুই নভোচারী আইএসএসে থাকবেন। তবে মহাকাশের আবহাওয়ার কারণে, ক্যাপসুলটি আইএসএস ছাড়তে পারবে না আগামী বুধবারের আগে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, তারা সেদিনই মহাকাশ থেকে ফ্লোরিডার উপকূলের উদ্দেশে রওনা দেবেন।