ভারতের চালের রপ্তানি মূল্য হ্রাস পেয়েছে

ভারতে চালের রপ্তানি মূল্য এখনো ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। চাহিদা কমে যাওয়া এবং অন্যান্য চাল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা বাড়ার কারণে দেশটিতে চালের রপ্তানি মূল্য হ্রাস পাচ্ছে। তবে ভারতে দাম কমলেও, চলতি সপ্তাহে ভিয়েতনামে চালের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভারতে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত সেদ্ধ চালের রপ্তানি মূল্য বর্তমানে টনপ্রতি ৪০৩-৪১০ ডলার, যেখানে গত সপ্তাহে ছিল ৪০৯-৪১৫ ডলার। ভারতের সংবাদমাধ্যম লাইভ মিন্ট জানিয়েছে, অন্যান্য দেশের চালের রপ্তানি মূল্য কমে যাওয়ার ফলে ভারতের চালের দামও কমেছে।

ভারতে ২০২২ সালে কম বৃষ্টিপাতের কারণে উৎপাদন সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, ফলে সে বছরের সেপ্টেম্বরে বাসমতী ছাড়া অন্যান্য চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়। ২০২৩ সালে অন্যান্য চালের রপ্তানির ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে রেকর্ড পরিমাণ ফসল উৎপাদন হওয়ায় সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নত হওয়ায় চাল রপ্তানির বিধিনিষেধ ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা হয়।

ব্যবসায়ীদের মতে, বর্তমানে ক্রেতারা বিকল্প সরবরাহকারীদের কাছ থেকে চাল কিনতে শুরু করেছে, যার ফলে ভারতের চালের দামের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে।

এদিকে, ভিয়েতনাম ফুড অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুসারে, বৃহস্পতিবার দেশটিতে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম ছিল টনপ্রতি ৩৯২ ডলার, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৮৯ ডলার। ভিয়েতনামের মেকং ডেলটা অঞ্চলের কৃষকরা শীত-বসন্ত মৌসুমের প্রায় অর্ধেক ফসল তুলে ফেলেছেন, তবে সরকারের চাল ক্রয় ও মজুত পরিকল্পনার স্পষ্ট প্রভাব এখনো দৃশ্যমান নয়।

থাইল্যান্ডেও চলতি সপ্তাহে চালের দাম কিছুটা কমেছে। দেশটিতে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চাল গত সপ্তাহে টনপ্রতি ৪১৫ ডলার থেকে কমে ৪০৫-৪০৮ ডলারে পৌঁছেছে। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, মুদ্রার বিনিময় হার পরিবর্তনের কারণে চালের দামে প্রভাব পড়েছে।

ব্যাংককের এক ব্যবসায়ী বলেছেন, “ভিয়েতনাম এবং ভারতের চালের দাম থাইল্যান্ডের তুলনায় অনেক কম, তাই পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও চাহিদা কমে গেছে।” আরেক ব্যবসায়ী জানান, “ভারত ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোর কাছ থেকে নতুন চালের সরবরাহ বাড়ায়, এ বছর থাইল্যান্ডের চালের চাহিদা আরও কমে যেতে পারে। বিশেষ করে নিয়মিত গ্রাহকদের কাছ থেকে চাহিদা স্থিতিশীল থাকলেও মুদ্রার ওঠানামার কারণে দাম টনপ্রতি ৪১০ ডলারের বেশি হবে না।”

ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চাল রপ্তানিকারক দেশ, যা বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ চাল সরবরাহ করে। ভারতের পরেই বিশ্ববাজারে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান করছে। ২০২৩ সালে এই চারটি দেশ সম্মিলিতভাবে যত চাল রপ্তানি করেছে, ভারত একাই তার চেয়ে বেশি রপ্তানি করেছে। ভারত মোট ১৪০টি দেশে চাল রপ্তানি করে, যার কারণে ভারতের চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দামে প্রভাব ফেলে।

গত বছরের অক্টোবর মাসে ভারত চাল রপ্তানি থেকে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, এরপর থেকে বিশ্ববাজারে চালের দাম কমতে থাকে। তবে বাংলাদেশে শীত মৌসুম থেকেই চালের দাম বাড়তি রয়েছে, এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হলেও দাম কমছে না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।