দেশে দেশে রমজান পালনে সাংস্কৃতিক ভিন্নতা

ইন্দোনেশিয়া: ইন্দোনেশিয়ার প্রায় ৮৫% জনসংখ্যা মুসলিম, যা মোট প্রায় ২৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ। দেশটি বিশেষভাবে ইফতারে তেল ও মশলা জাতীয় খাবারের পরিবর্তে ফলমূল ও ফলের শরবতকে প্রাধান্য দেয়। এছাড়া মিষ্টান্নও তাদের ইফতারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইন্দোনেশিয়ানরা ইফতারে বুবুর চ্যান্ডিল, মিষ্টি আলু দিয়ে তৈরি বিজি সালাক, কলা, মিষ্টি আলু বা কুমড়া দিয়ে তৈরি কোলাক, এবং এস পিসাং ইজো এর মতো ঐতিহ্যবাহী খাবার খায়।

বাংলাদেশ: বাংলাদেশের ৮৬% জনসংখ্যা মুসলিম, যা প্রায় ১৫ কোটি মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ ইফতারে ভাজাপোড়া, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, সবজি পাকোড়া ইত্যাদি খেতে পছন্দ করে। তাছাড়া, মুড়ি, ছোলা বুট, জিলাপি, হালিমসহ নানা রকমের শরবত ও ফলও থাকে। বিশেষত, খেজুর প্রায় অপরিহার্য একটি খাবার, যা ইফতারে উপস্থিত থাকে। মসজিদগুলোতেও ইফতার আয়োজনে খেজুর থাকে।

নাইজেরিয়া: নাইজেরিয়ায় মুসলিম জনগণের সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি ৭০ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ৪২%। নাইজেরিয়ানরা ইফতারে শর্করা জাতীয় খাবার ও ফলমূল যেমন জল্লফ রাইস, মই মই (পুডিং), ইয়াম, আকারা (বিন কেক) এবং ইলুবো ও আমালা’র মতো ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে পছন্দ করে।

ইরান: ইরানে ৯২% জনগণ মুসলিম, যেখানে ৮ কোটি ২৫ লাখ মুসলিম বাস করেন। ইফতারে তাদের প্রচলিত খাবারের মধ্যে রয়েছে জাফরান স্যুপ, শোলেহ জার্দ পুডিং, আশ রাসতেহ (ঘন স্যুপ), হালিম এবং তাবরেজি চিজ। তাদের ইফতারে খেজুরের উপস্থিতি অপরিহার্য।

আলজেরিয়া: আলজেরিয়ায় ৯৫% মুসলিম, যেখানে মোট মুসলিম জনগণের সংখ্যা প্রায় ৪.৫ কোটি। তাদের ইফতারে থাকে পিজ্জা ‘সোয়ারবা’, সবজি রোল, আলু ও সবজি দিয়ে তৈরি দোলমা, সিগার পানীয়, এবং নানা ধরনের স্যুপ।

সৌদি আরব: সৌদি আরবের মুসলিম জনগণ প্রায় ৩.২৫ কোটি, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৮৫%। তাদের ইফতারে ‘গাহওয়া’ (অ্যারাবিক কফি) এবং খেজুর খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন অঞ্চলে ইফতার খাবারে ভিন্নতা দেখা যায়, যেমন পশ্চিমাঞ্চলে শৌরাইক রুটি, পূর্বাঞ্চলে সালুনা (মাংস ও সবজির স্টু), এবং কেন্দ্রীয় অঞ্চলে আসিদাহ, মারগগ, মাফরৌক ও মাতাজিজ নামক খাবার খাওয়া হয়।

পাকিস্তান: পাকিস্তানে রমজান মাসের ঐতিহ্যবাহী ইফতারে থাকে কাবাব, চানা চাট, দই বালাই, কাল্লি (নুডলস্ স্যুপ), নিমকি, পাপড়, ভেজিটেবল পাকোড়া, এবং ফ্রুট সালাদ।

ভারত: ভারতে মুসলিমরা মুঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে ইফতার করে। রাজ্যভেদে ইফতারের খাবারের বৈচিত্র্য রয়েছে। হায়দরাবাদে হালিম, কলকাতায় খেজুর, ফল, চিকেন শর্মা, বটি কাবাব, কাটলেট এবং দক্ষিণ ভারতে ননবো কাঞ্জি ইফতার প্লেটে থাকে।

মালদ্বীপ: মালদ্বীপের মুসলিমরা রমজান মাসে ‘রাইভারু’ নামক কবিতা আবৃত্তি করে থাকে। তাদের ইফতারে থাকে কুলহি বোয়াকিবা (মাছের কেক), ফোনিবোয়াকিবা (ময়দার কেক), গুলহা (মাছের কোফতা) ইত্যাদি।

এভাবে, বিভিন্ন দেশে রমজান পালনের মধ্যে খাদ্যাভ্যাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ভিন্নতা স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়।

One Reply to “দেশে দেশে রমজান পালনে সাংস্কৃতিক ভিন্নতা”

  1. এ রমজান মাসে আমাদের তেলের জিনিস কম খাওয়া দরকার। ফলমূল বেশি করে খাওয়া দরকার। যেন আমাদের শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে আল্লাহর ইবাদত করার জন্য। তাই আমরা ২০% তেলের জিনিস খাব এবং বাকি ৮০% ফলমূল দুই মিষ্টি ইত্যাদি খাবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।