রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অস্ত্র বিক্রি বৃদ্ধি, লাভবান যুক্তরাষ্ট্র

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলছে, এবং এই যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বের অস্ত্র বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি অস্ত্র বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র, যা বিশ্বব্যাপী অস্ত্র বাণিজ্যের ৪৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি ফ্রান্সের চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি, যা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এই তথ্যটি স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপরি) এর এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।

সিপরি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত অস্ত্র বিক্রির পরিমাণে বিশ্বব্যাপী তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে, একটু বিস্তারিত বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনগুলি ক্রেতাদের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।

২০২০ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে ইউক্রেন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানি করেছে, এবং তাদের অস্ত্র আমদানির পরিমাণ অনেক বেড়েছে। বর্তমানে, তারা অস্ত্র আমদানির শীর্ষে রয়েছে। এই সময়ে, বিশ্বব্যাপী যে অস্ত্র রপ্তানি হয়েছে, তার ৯ শতাংশই গেছে ইউক্রেনে।

একই সময়ে, ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে অস্ত্র কেনার পরিমাণ ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সরাসরি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রভাব। সিপরি রিপোর্ট বলছে, মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কে অনিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও অস্ত্র কেনাবেচার পরিমাণ বেড়েছে।

রিপোর্টের একজন লেখক, ম্যাথু জর্জ বলেছেন, রাশিয়া আক্রমণ করতে পারে এই ভয়েই ইউরোপ অস্ত্র কিনছে। তবে, সৌদি আরব, ভারত এবং চীন, যারা আগে অনেক অস্ত্র আমদানি করতো, তারা এই সময়ে অস্ত্র কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে।

সিপরি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে ৩৫টি দেশ ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ অস্ত্র এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, ১২ শতাংশ জার্মানি এবং ১১ শতাংশ পোল্যান্ড থেকে।

এটি থেকে স্পষ্ট হয় যে, যদি ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনকে অস্ত্র দেয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়, তবে ইউক্রেনের অস্ত্র সরবরাহে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হতে পারে। ২০২০ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে ইউক্রেনই একমাত্র ইউরোপীয় দেশ, যা অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে প্রথম দশে রয়েছে, যদিও ইউরোপের অনেক দেশ অস্ত্র আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে, তবে তারা প্রথম দশে নেই। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত, তবে তারা অস্ত্র কেনার পরিমাণ কমিয়েছে।

সিপরি আর্মস ট্রান্সফার প্রোগ্রামের সিনিয়র গবেষক পিটার ওয়েজম্যান বলেছেন, ইউরোপের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫০০টি যুদ্ধবিমান এবং অন্যান্য অস্ত্র কেনার বরাত দিয়েছে, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ১০৭টি দেশে অস্ত্র রপ্তানি করেছে এবং বিশ্বের মোট অস্ত্র রপ্তানির ৪৩ শতাংশ তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি ফ্রান্সের অস্ত্র রপ্তানির পরিমাণের চারগুণেরও বেশি, বলে জানিয়েছেন ম্যাথিউ জর্জ।

এছাড়া, ২০১৫ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানি ৬৩ শতাংশ কমে গেছে। ২০২১ ও ২০২২ সালে তারা গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম অস্ত্র বিক্রি করেছে। পিটার ওয়েজম্যান বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা অন্য দেশে অস্ত্র বিক্রির সুযোগ হারিয়েছে। তাদের অস্ত্র রপ্তানি এখন মূলত চীন এবং ভারতের দিকে সীমাবদ্ধ।

One Reply to “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অস্ত্র বিক্রি বৃদ্ধি, লাভবান যুক্তরাষ্ট্র”

  1. আমরাও আমাদের দেশের জন্য এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ মিসাইল তৈরি করব। কেননা যখন তখন শত্রু দেশ থেকে আমাদের দেশে আক্রমণ করতে পারে। তাই আমরা সবসময় সতর্ক থাকবো এবং দেশকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত থাকবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।