ইলন মাস্কের স্টারলিংক বাংলাদেশে এলে কী সুফল মিলবে, খরচ কত?

দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী স্টারলিংক বাংলাদেশে আনার জন্য সরকার কাজ করছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, স্টারলিংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের সঙ্গে ফোনে আলোচনা করেছেন।

প্রশ্ন হচ্ছে, স্টারলিংক বাংলাদেশে এলে কী সুফল পাওয়া যাবে? প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্টারলিংক বাংলাদেশের দুর্গম এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এর ফলে গ্রাম এবং শহরের মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগের পার্থক্য কমে যাবে। বিশেষত, গ্রামে বসবাসকারী তরুণরা সহজেই ফ্রিল্যান্সিংসহ ইন্টারনেটভিত্তিক কাজ করতে পারবেন।

স্টারলিংক দুর্যোগ পরিস্থিতিতে দ্রুত যোগাযোগ পুনঃস্থাপনেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আরও একটি সুবিধা হলো, স্টারলিংক গোপনীয়তা রক্ষা করে যোগাযোগ করতে সক্ষম। যদি এটি বাংলাদেশে আড়িপাতার সুযোগ না দিয়ে সেবা প্রদান করে, তাহলে অনেকেই এর ইন্টারনেট সেবায় আগ্রহী হতে পারেন।

তবে, স্টারলিংক-এর ইন্টারনেট সেবা ব্যয়বহুল হতে পারে, যা সাধারণ মানুষের জন্য কিছুটা কঠিন হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন বলেন, স্টারলিংক স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে, যা দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি করবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যমান ইন্টারনেট সেবার মানের সমস্যা রয়েছে, এবং স্যাটেলাইট সেবা এলে যারা উচ্চমানের ইন্টারনেট চান, তাদের জন্য এটি একটি বিকল্প হয়ে উঠবে।

স্টারলিংক কী?

বর্তমানে বাংলাদেশে যে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা হয়, তা সাবমেরিন কেবলভিত্তিক, অর্থাৎ সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে তারের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ এনে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর এবং ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (আইএসপি) সেবা দেয়। তবে, স্টারলিংক স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে। স্টারলিংক হলো পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপিত হাজার হাজার স্যাটেলাইটের একটি সমষ্টি, যা পৃথিবীজুড়ে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদান করতে সক্ষম।

চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত, স্টারলিংকের ৬,৯৯৪টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। স্পেসএক্সের স্টারলিংক প্রকল্প ২০১৫ সালে শুরু হয় এবং ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি চালু হয়। বর্তমানে বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে স্টারলিংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে, এবং দক্ষিণ এশিয়ায় এর কার্যক্রম শুরু হয় ভুটানে।

স্টারলিংক কীভাবে কাজ করে?

স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা পেতে গ্রাহককে একটি টেলিভিশন অ্যান্টেনার মতো ডিভাইস স্থাপন করতে হয়, যা পৃথিবী প্রদক্ষিণকারী স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। এই অ্যানটেনার সঙ্গে একটি স্টারলিংক রাউটার সংযুক্ত করলে গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা পেতে পারেন।

স্টারলিংক-এর ডাউনলোড গতি ২৫ থেকে ২২০ এমবিপিএস হতে পারে, যেখানে বেশিরভাগ ব্যবহারকারী ১০০ এমবিপিএসের বেশি গতি পান। আপলোড গতি সাধারণত ৫ থেকে ২০ এমবিপিএস হয়।

খরচ

স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, বাসাবাড়িতে সেবা গ্রহণ করতে কিছু সরঞ্জাম কিনতে হবে। এতে একটি রিসিভার, কিকস্ট্যান্ড, রাউটার, তার এবং পাওয়ার সাপ্লাই থাকবে, যার মূল্য ৩৪৯ থেকে ৫৯৯ ডলার (৪৩ হাজার থেকে ৭৪ হাজার টাকা)।

আবাসিক গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংকের মাসিক সর্বনিম্ন ফি ১২০ ডলার (প্রায় ১৫ হাজার টাকা), তবে কর্পোরেট গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংক কিট এবং মাসিক ফি দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে।

স্টারলিংক বাংলাদেশে আসবে কি?

স্টারলিংক বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করার জন্য বেশ কিছু বছর ধরে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। তাদের ওয়েবসাইটে একটি মানচিত্র প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, চলতি বছর বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেবা শুরু হবে।

২০২৩ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে স্টারলিংকের প্রযুক্তি পরীক্ষা করা হয় এবং সে সময় বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০২৪ সালের অক্টোবরে, স্টারলিংকের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ওই সময় একটি নির্দেশিকার খসড়া প্রস্তুত করেছে।

বিটিআরসির প্রস্তাবিত নির্দেশিকা ‘নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট সার্ভিসেস অপারেটর’ শিরোনামে তৈরি করা হয়েছে, যা মূলত স্টারলিংকের জন্য প্রস্তুত। খসড়াটি এখনও অনুমোদন পায়নি। বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী জানান, মন্ত্রণালয় থেকে কিছু পর্যবেক্ষণ পেয়েছেন এবং সংশোধন শেষে খসড়াটি শীঘ্রই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

বিগত সরকার স্টারলিংকের সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়েছিল যে, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আড়িপাতার সুযোগ রাখতে হবে। তবে স্টারলিংক সাধারণত আড়িপাতার সুযোগ দিতে চায় না। এখন নতুন সরকার এই বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা স্পষ্ট হয়নি।

One Reply to “ইলন মাস্কের স্টারলিংক বাংলাদেশে এলে কী সুফল মিলবে, খরচ কত?”

  1. খরচ কম ঠিক আছে কিন্তু এটার কাজ কি এটার গুরুত্ব কি এটা কিভাবে ব্যবহার করব ব্যবহার করলে কি লাভ হবে সবকিছু জানা দরকার

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।