বর্তমান ডিজিটাল যুগে আপনার সন্তানের পড়াশোনার চাপ আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি স্কুলের বাইরে নাচ, গান, ছবি আঁকা, আবৃত্তি, ক্রিকেট ও ফুটবল— এসব সবই চলে সমান তালে। এসব কারণে শিশুর মানসিক চাপও বাড়ছে, এবং প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার জন্য উদ্বেগের বোঝা বাড়ছে। এ অবস্থায়, সন্তানের মন স্থির রাখতে ধ্যানের অভ্যাস করানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মনোবিদরা বলছেন, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ছোটদের মস্তিষ্কের গঠন ও বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘসময় ধরে অতিরিক্ত মানসিক চাপ ভোগ করা শিশুর বুদ্ধির বিকাশ ও স্মৃতিশক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ইউনিসেফের এক সমীক্ষায় জানা গেছে, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় ভোগা শিশুদের আচরণে পরিবর্তন ঘটে। তারা বেশি অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে এবং ভবিষ্যতে মেলামেশায় সমস্যা হতে পারে, এমনকি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই, অভিভাবকদের উচিত আগে থেকেই সতর্ক থাকা এবং ছোট থেকেই ধ্যানের অভ্যাস করানো। এতে শিশুর মানসিক চাপ কমবে, মনোযোগ বাড়বে এবং চিন্তা-কষ্টও কমে যাবে। বিশেষভাবে, ‘অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিজঅর্ডার’ (এডিএইচডি) আক্রান্ত শিশুর জন্য ধ্যান বিশেষভাবে উপকারি।
পাঁচ মিনিটের মাইন্ডফুল ব্রিদিং:
শান্ত হয়ে বসে চোখ বন্ধ করুন এবং নাক দিয়ে গভীরভাবে শ্বাস টানুন। ৩-৪ সেকেন্ড ধরে শ্বাস আটকে রাখুন, তারপর ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। তাড়াহুড়া না করে ধীর গতিতে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। নাক দিয়ে যতক্ষণ শ্বাস নেবেন, মুখ দিয়ে তার থেকে বেশি সময় ধরে শ্বাস ছাড়ুন। স্কুলের পরীক্ষা বা বোর্ড পরীক্ষার সময় যখন উদ্বেগ বাড়ে, তখন এই ধ্যান মানসিক চাপ কমাতে এবং মন স্থির রাখতে সাহায্য করবে।
মোমবাতি ধ্যান:
ঘর অন্ধকার করে একটি মোমবাতি জ্বালান এবং সন্তানের কাছে তাকে শান্ত হয়ে বসে মোমবাতির শিখার দিকে তাকিয়ে থাকতে বলুন। চোখের পাতা না ফেলে যতক্ষণ সম্ভব তাকিয়ে থাকতে বলুন। মন বারবার বিভ্রান্ত হতে পারে, তবে অভ্যাস করলে মন স্থির হবে দ্রুত। যে শিশুদের মনোযোগ কম এবং অস্থিরতা বেশি, তাদের জন্য এটি খুবই কার্যকর হতে পারে।
পদ্মাসন ধ্যান:
শান্তভাবে পদ্মাসনে বসতে বলুন। চোখ বন্ধ করে প্রথমে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিন। তারপর মুখ দিয়ে শ্বাস নিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রাখুন। এরপর ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন এবং শ্বাস ছাড়ার সময় পেট যেন ভেতরে চলে আসে। এই প্রক্রিয়া ২০ বার করতে হবে। নিয়মিত কপালভাতি ধ্যান মানসিক প্রশান্তি, মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তির উন্নতি করতে সহায়তা করে।
এই সহজ ধ্যানের অভ্যাসগুলো শিশুর মানসিক চাপ কমাতে এবং তাদের উন্নত মনোযোগ ও সামর্থ্য গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
আমাদের শারীরিক বা মানসিক চাপ একটি হুইসেল বা শিস হিসেবে কাজ করে। যেহেতু শিক্ষাগত প্রয়োজনীয়তাসমূহ শিক্ষার সকল স্তর প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে এবং শিখনফল ও গ্রেডিংয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে, উল্লেখসংখ্যক শিক্ষার্থীরা একধরনের মানসিক চাপের মধ্যে থাকে।