আইনের শাসন না থাকলে কেউ নিরাপদ নয় – তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “আমার দল বিএনপি বিশ্বাস করে যে, দল, মত, ধর্ম ও দর্শন প্রতিটি মানুষের নিজস্ব বিষয়। তবে রাষ্ট্র সবার। ধর্ম যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার। একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের সামনে আগামী জাতীয় নির্বাচন একটি বড় সুযোগ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, সবার জন্য একটি নিরাপদ গণতান্ত্রিক দেশ গড়তে বিএনপি আপনাদের সমর্থন ও সহযোগিতা চায়।”

আজ শুক্রবার, চট্টগ্রাম নগরীর জেএমসেন হলে ‘শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়াল বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান আরও বলেন, “সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু শব্দটি একটি দেশের জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়, এর বাইরে কিছু নয়। এই বাংলাদেশে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, বাঙালি-অবাঙালি, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কিংবা সংশয়বাদী—বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের একমাত্র গর্বিত পরিচয় হল আমরা বাংলাদেশি। এই বাংলাদেশ আপনার, আমার, আমাদের সবার। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে। এটি বিএনপির নীতি, এটি বিএনপির রাজনীতি।”

বিপ্লব দে পার্থ ও রাজীব ধর তমালের যৌথ পরিচালনায় এই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, বিএনপির আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু চৌধুরী এবং বিভিন্ন মঠ মন্দিরের সাধু সন্ন্যাসীসহ জেলা ও আঞ্চলিক কমিটির নেতৃবৃন্দ।

তারেক রহমান বলেন, “গত এক দশক ধরে বাংলাদেশে এক নৃশংস স্বৈরাচার শাসনমূলক পরিস্থিতি ছিল, যা জনগণের ওপর এক জগদ্দল পাথরের মতো চাপানো হয়েছিল। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে, দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, গণতন্ত্রপন্থী ছাত্র-জনতা ঐ স্বৈরাচারী শাসককে বাংলাদেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য করে। যদিও সেই স্বৈরাচার পালিয়েছে, গণতন্ত্র এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। পলাতক সেই স্বৈরাচারের দোসররা নানা কৌশলে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা সংসদ ও সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নয়।”

তিনি আরও বলেন, “গত ১৭ বছর আপনাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা যদি এই বিষয়টি বুঝে থাকেন, তবে এটি তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধি। একটি সম্প্রীতি, সমৃদ্ধি ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার পথে এই উপলব্ধি আমাদের সকলের জন্য সহায়ক হবে। রাষ্ট্র ও সমাজে নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত করার জন্য কোনো দলীয় পরিচয় প্রযোজ্য নয়। কোনো নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘সংখ্যালঘু’ বা ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ’ পরিচয়, একমাত্র আইন ও গণতন্ত্রের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।”

তারেক রহমান বলেন, “পলাতক স্বৈরাচারের বর্বর শাসনামলে, যাদেরকে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, অন্ধকারে মৃত্যু আতঙ্কে দিন কাটাতে হয়েছিল, তারা অধিকাংশই তথাকথিত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সদস্য। তাদের পরিচয়, সম্মান বা নিরাপত্তা কিছুই তাদের রক্ষা করতে পারেনি। রাষ্ট্রে যদি আইনের শাসন না থাকে, তাহলে সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগরিষ্ঠ—কেউ নিরাপদ নয়। আইনের শাসন ছাড়া রাষ্ট্রে কোনো নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।”

অনুষ্ঠানে সনাতনী সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “পলাতক স্বৈরাচারের শাসনামলে, দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং তাদের ধর্মীয় স্থানগুলোতে হামলার ঘটনায় দেখা যায় যে, অধিকাংশ হামলার পেছনে ধর্মীয় কারণে নয়, বরং অবৈধ লাভের জন্য দুর্বলের ওপর হামলা বা অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। তাই আপনাদের প্রতি আমার আহ্বান, ভবিষ্যতে ধর্মীয় পরিচয়কে যেন কেউ তাদের হীনস্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে। এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।”

2 Replies to “আইনের শাসন না থাকলে কেউ নিরাপদ নয় – তারেক রহমান”

  1. এই বাংলাদেশে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, বাঙালি-অবাঙালি, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কিংবা সংশয়বাদী—বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের একমাত্র গর্বিত পরিচয় হল আমরা বাংলাদেশি। বাংলাদেশ কে নিরাপদ রাখতে আইনের শাসন দরকার । আশা করছি আইনের মাধ্যমে দেশ নিরাপদে থাকবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।