বিদেশি ঋণ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে ঋণের পরিমাণ বাড়লেও, তার বিপরীতে পরিশোধের পরিমাণ কম হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বাংলাদেশে মোট ৩৯৪ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি ঋণ এসেছে। এই সময়ে ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ২৪২ কোটি ডলার।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের জুলাই-জানুয়ারি মাসের বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে এই চিত্র উঠে এসেছে। তবে অর্থবছরের শুরুতে বিদেশি ঋণের অর্থ ছাড়ের তুলনায় পরিশোধের পরিমাণ বেশি ছিল।
গত সাত মাসে সবচেয়ে বেশি ঋণ এসেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে, যার পরিমাণ প্রায় ১১০ কোটি ডলার। এছাড়া বিশ্বব্যাংক দিয়েছে ৮৮ কোটি ডলার এবং জাপান ৬৯ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে।
ইআরডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে বিদেশি ঋণ ছাড়ের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যার ফলে সাত মাসের পরিশোধের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে প্রায় দেড়শ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ ছাড় হয়েছে।
এদিকে, বিদেশি ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সরকারকে মোট ২৪২ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৪ কোটি ডলার আসল পরিশোধ এবং ৮৮ কোটি ডলার সুদ হিসেবে শোধ করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে একই সময়ে ১৮৫ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল।
তবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বাড়েনি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে মোট ৪৪০ কোটি ডলারের বিদেশি সহায়তা পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু এবারে সেই পরিমাণ ৪৬ কোটি ডলার কমে ৩৯৪ কোটি ডলার হয়েছে।
এদিকে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুযায়ী প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি সংস্থা ও দেশের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা খুব বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাচ্ছে না। গত সাত মাসে উন্নয়ন-সহযোগীরা ২৩৫ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা গতবারের তুলনায় ৪৮২ কোটি ডলার কম। গত বছর একই সময়ে ৭১৭ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল।
বিদেশি ঋণ পরিশোধ নিয়ে অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ, কয়েক বছর ধরেই ঋণ পরিশোধের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট ১১০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল। পরবর্তী দশ বছরে ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ২০১ কোটি ডলারে পৌঁছায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই পরিমাণ আরও বেড়ে ২৯৯ কোটি ডলারে পৌঁছায়। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩৩৬ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে, যা গত এক দশকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে, বিশেষ করে গত দুই বছর ধরে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই চাপ এমন এক সময়ে বাড়ছে, যখন দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলমান। অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে রিজার্ভ ও বাজেটের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, যা সংশ্লিষ্টদের চিন্তার বিষয়।
মানুষের জীবনের এক অনস্বীকার্য বাস্তবতা হচ্ছে- ঋণ আদান-প্রদান। প্রয়োজনের সময় মানুষ ঋণ নেয়। দিনের আদান-প্রদানে ঋণ গ্রহিতা টাকা নিয়ে যেমন উপকৃত হয় এবং তার প্রয়োজন পূরণ করতে পারে।
একজন মানুষ তখনই ঋণ করে যখন তার আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়।
আবার সে তখন ঋণ প্রদান করে যখন তার আত্মিক অবস্থা ভালো হয়। যদি আর্থিক অবস্থা খারাপ না হতো তাহলে কেউ কখনো ঋণ করত না।
সাত মাসে বিদেশী ঋণ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৯৮ কোটি ডলার পর্যন্ত পৌঁছিয়েছে এবং বর্তমান পরিষদ হয়েছে মাত্র ২৪২ কোটি ডলার। মূলত ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চাপ বেড়ে গিয়েছে যার কারণে বাজেটের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে যেটি একটি খুবই চিন্তার বিষয়!
ঋণ যেমন উন্নতির কাজে লাগে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ঋণের যথার্থ ব্যবহার করলে দেশের মান উন্নয়ন করা সম্ভব।