‘ট্রাম্প একজন উন্মাদ’: গাজা দখলের পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের প্রতিক্রিয়া

৭২ বছর বয়সী ফাতি আবু আল-সাঈদ লাঠির সাহায্যে গাজার খান ইউনিসের আল-কাতিবা মহল্লায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে হাঁটছেন। গত ১৯ জানুয়ারি, ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধবিরতি শুরুর পর তিনি গাজার আল-মাওয়াসি এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে খান ইউনিসে ফিরে এসেছিলেন। এরপর থেকেই এভাবে ধ্বংসস্তূপের মাঝে প্রতিদিন হাঁটতে বের হন তিনি।

১৫ মাসের ইসরায়েলি বোমা হামলায় ধ্বংস হওয়া এলাকায় সাবধানে পা ফেলে সাঈদ একটি ধ্বংস হওয়া বাড়ির দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, “আপনি কি ওই ধ্বংসস্তূপটি দেখছেন? এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবকিছুর চেয়ে বেশি মূল্যবান।”

ফাতি আবু আল-সাঈদ জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার ঘটনা তাঁর জন্য নতুন কিছু নয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সময় তাঁর বাবা জোরপূর্বক জাফা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল, যা এখন ইসরায়েলের অংশ। তাঁর মায়ের পরিবারকেও বিতাড়িত করা হয়েছিল। এই প্রথম বিপর্যয় বা ‘নাকবা’র কাহিনী শুনে তিনি বড় হয়েছেন এবং এখন আবার এক নতুন বিপর্যয়ে বেঁচে আছেন।

ফাতি আবু আল-সাঈদ তাঁর পরিবারের সাথে থাকা বেশ কিছু শিশুদের সামনে এই গল্প শোনাচ্ছিলেন। তারা হালকা বৃষ্টির এবং বাতাসের পূর্বাভাস সত্ত্বেও মনোযোগ দিয়ে তাঁর কথা শুনছিল। বাস্তুচ্যুত শিশুরা ফিরে এসে যখন তাদের বাড়ি খুঁজে পায়নি, তখন তারা ধ্বংসস্তূপে আশ্রয় নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করার চেষ্টা করছে।

তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলে তাদের জীবন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গাজার দখল নিয়ে করা মন্তব্যের পর সাঈদের মধ্যে হাস্যরসের সুর দেখা গেল। ট্রাম্প গাজায় ‘মধ্যপ্রাচ্যের সমুদ্রসৈকত’ গড়ার স্বপ্ন দেখছেন। সাঈদ এর প্রতিক্রিয়া জানান, “ট্রাম্প এমনভাবে কথা বলছেন যেন তিনি জমি বিতরণের রাজা। তিনি উচিত ইসরায়েলিদের অন্য কোথাও পাঠানো এবং গাজাকে ছেড়ে দেওয়া।”

তিনি বলেন, “গণহত্যার মধ্যে আমরা ছেড়ে যাইনি। আমরা এখানকার জন্মভূমিতে আছি, আমাদের জমি এবং এই পৃথিবী আমাদের জন্য অমূল্য। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কখনও কিছু দিতে পারবে না।”

ট্রাম্পের গাজার পুনর্নির্মাণ পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন সাঈদ। তিনি বলেন, “গাজা আমাদের ভূমি, এটি কোনো রিয়েল এস্টেট প্রকল্প নয়। এটি আমাদের জন্মভূমি, এবং আমরা কখনও এখান থেকে চলে যাব না।”

যুদ্ধের সময় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ, অনাহার এবং হাসপাতালে হামলার কারণে ১৭ হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে, হাজার হাজার শিশু এতিম হয়েছে। সাঈদ এর ওপর মন্তব্য করেন, “যুদ্ধের সময় তারা আমাদের অনাহারে রেখেছে, বোমা মেরেছে। যখন আমরা দেশ ছেড়ে যেতে অস্বীকার করি, তখন তারা আমাদেরকে অবাক দৃষ্টিতে দেখে।”

তিনি আরও বলেন, “ফিলিস্তিনিরা কখনও নিজেদের ভূমি ছেড়ে যাবে না, যতই হুমকি আসুক। আমরা এখানে আছি, এবং এখানে থাকব।”

সাঈদ ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি যদি মনে করেন, আমরা সব কিছু পেছনে ফেলে চলে যাব, তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। গাজার মাটির সাথে আমাদের সম্পর্ক কখনোই ছিন্ন হবে না।”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।