কিডনিতে পাথর বলতে সেই কঠিন পদার্থগুলোকে বোঝায় যা কিডনির ভিতরে থাকা টিউব বা কালেক্টিং সিস্টেমে তৈরি হয়, তবে পাথর মূত্রনালি বা মূত্রথলিতেও হতে পারে। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪-২০% মানুষ কিডনির পাথর রোগে ভুগছে, সাধারণত ২০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়।
কীভাবে বা কেন পাথর হয়:
পাথর তৈরি হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, প্রস্রাবের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম, অক্সালেট, ইউরিক এসিড বা মূত্রের দ্রবণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ক্রিস্টাল জমে পাথর তৈরি হয়। কিছু ক্ষেত্রে মূত্রনালির জন্মগত ত্রুটির কারণে পাথর সৃষ্টি হতে পারে।
পাথরের প্রকারভেদ:
কিডনিতে বিভিন্ন ধরনের পাথর হতে পারে, এর মধ্যে ক্যালসিয়াম ও স্ট্রুভাইট পাথর সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। অন্যান্য পাথরের মধ্যে ক্যালসিয়াম অক্সালেট, ক্যালসিয়াম ফসফেট, স্ট্রুভাইট, ইউরিক এসিড এবং সিস্টিন উল্লেখযোগ্য।
উপসর্গ:
কিছু ক্ষেত্রে কিডনিতে পাথর থাকলেও উপসর্গ নাও থাকতে পারে। তবে পাথরের ধরন, অবস্থান ও আকার অনুযায়ী বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন—কোমর থেকে কুচকি পর্যন্ত তীব্র ব্যথা, প্রস্রাবের রঙ লাল হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, প্রস্রাব আটকে যাওয়া, বমিভাব ও বমি, এবং জ্বর।
রোগ নির্ণয়:
রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীর পূর্ণ ইতিহাস নেয়া হয়, যেমন পরিবারে কেউ পাথরের রোগে ভুগেছে কিনা, পানি খাওয়ার পরিমাণ, পাথর ছাড়া অন্যান্য রোগের ইতিহাস, ব্যবহৃত ওষুধ এবং দৈনিক খাদ্য তালিকা। এছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষা যেমন রক্ত, প্রস্রাবের পরীক্ষা, এক্স-রে, আল্ট্রাসোনো, সিটি স্ক্যান ইত্যাদি করা হয়।
চিকিৎসা:
পাথরের অবস্থান ও আকার অনুযায়ী চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়। ছোট পাথর হলে ওষুধ দিয়ে মেডিকেল এক্সপালসিভ থেরাপি দেওয়া যেতে পারে, তবে পাথর বড় হলে শক ওয়েভ লিথোট্রিপসি, পারকিউটেনিউয়াস নেফ্রোলিথোটমি (পিসিএনএল), বা রেট্রোগ্রেড ইন্ট্রারেনাল সার্জারি (আরআইআরএস) সহ নানা অপারেশন করা যেতে পারে।
প্রতিরোধ:
যাদের বারবার কিডনিতে পাথর হচ্ছে, তাদের জন্য পাথরের ধরন জানাটা গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য তালিকা মেনে চললে অনেকাংশে বারবার পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। পানি বেশি খাওয়া, প্রোটিনের সঠিক পরিমাণ খাওয়া, লবণ কম খাওয়া এবং ক্যালসিয়াম শুধুমাত্র খাদ্য থেকে গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া, বিশেষ কিছু খাবার যেমন বিট, পালংশাক, মটরশুঁটি, চকলেট, স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি, বাদাম ইত্যাদি কিছু পাথরের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাই পাথরের ধরন জানার পর সেই অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
এইভাবে সচেতন হয়ে এবং উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে কিডনির পাথরের সমস্যাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।