ফেব্রুয়ারিতে বিএনপির মাঠে নামার ঘোষণা

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে। জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের সমর্থন অর্জন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নির্বাচনের বিষয়ে চাপে রাখার জন্য এই কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।

একই সঙ্গে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ভিত্তি করে, বিএনপি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ‘পরামর্শমূলক’ ঘোষণাপত্র তৈরি করছে। সরকারকে সহায়তা করতে এ ঘোষণা প্রণয়ন করা হচ্ছে।

গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

স্থায়ী কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, কর্মসূচি দুটি দুই পর্যায়ে বিভক্ত হবে। প্রথমে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে সমাবেশ হবে, পরে সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে দ্বিতীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই কর্মসূচি মূলত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপি ছাত্রদের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে কিছু পরিবর্তন ও সংশোধন করবে। সরকারের প্রস্তাবিত ঘোষণাপত্রে বিএনপি নিজস্ব মতামত সংযুক্ত করতে পারে বলে দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।

নতুন কর্মসূচি আসছে

রমজান মাসকে সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিতে কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। নেতারা আশা করছেন, এই জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির মাধ্যমে তারা জনগণের কাছে আরও পৌঁছাতে পারবেন।

বিএনপি নেতাদের মতে, সরকারের বর্তমান পরিস্থিতি, বিশেষত পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং নতুন ভ্যাট আরোপের কারণে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপির কর্মসূচি জনগণের সমর্থন পাওয়ার সুযোগ তৈরি করবে।

এক স্থায়ী কমিটির নেতা জানিয়েছেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার থেকে প্রথম কর্মসূচি শুরু হতে পারে, যা সারা দেশে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে হবে। দ্বিতীয় কর্মসূচি সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ফেরানোর দাবিতে হবে। বিএনপি চায়, রমজান মাসের আগেই এই কর্মসূচি শেষ করা হোক।

ভোটের সময়সূচি নিয়ে বিএনপির অবস্থান

বিএনপি চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবি করেছে, যদিও সরকার জানিয়েছে, ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। বিএনপি মনে করে, জুন পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে আরও অপেক্ষা করা ‘অতিরিক্ত সময়’ হবে, এবং তারা তা মেনে নিতে প্রস্তুত নয়।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, নির্বাচনের জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে জুলাই-আগস্টের মধ্যেই একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব।

ঘোষণাপত্রের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের বিষয়ে বিএনপি নেতারা আলোচনা করেছেন। তারা মনে করেন, বাহাত্তরের সংবিধানকে বাতিল করার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তা যুক্তিসংগত নয়। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের যে মূল্যবোধ রয়েছে, তা সংবিধানের ভিত্তি। তবে, কিছু পরিবর্তন বা সংশোধন প্রয়োজন হলে তা করা যেতে পারে।

বিএনপি জানাচ্ছে, ঘোষণাপত্রে তারা ১৭ বছরের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রাম এবং ত্যাগের কথা অন্তর্ভুক্ত করবে। দলটি এই ঘোষণাপত্রকে গণ-অভ্যুত্থানের ‘ডিক্লারেশন’ হিসেবে প্রকাশ করতে পারে এবং তা ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে না বলেও শর্ত যোগ করতে পারে।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, ঘোষণাপত্রের বিষয়গুলো চূড়ান্ত করার জন্য আজ আবার বৈঠক হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।