বস্ত্র ও পোশাক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা স্থগিতের আহ্বান

তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের চারটি সংগঠন গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পরিকল্পনা স্থগিত করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। তাদের দাবি, নতুন করে গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের আগে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। তারা গ্যাস সরবরাহ সংকট মোকাবিলায় সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করার প্রস্তাবও দিয়েছে এবং গ্যাসের মূল্য সংক্রান্ত মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে লেখা এক যৌথ চিঠিতে এই আহ্বান জানানো হয়। চিঠিতে সই করেছেন – তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ, নিট পণ্য রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএ, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ এবং টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিটিএলএমইএ)।

চিঠিতে বলা হয়, শিল্প ও অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে সহায়তার জন্য সংগঠনগুলো প্রস্তুত এবং অতিরিক্ত তথ্য সরবরাহ করতে ইচ্ছুক। তারা উল্লেখ করেন, সরকার নতুন করে শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে, যা প্রতি ঘনমিটারে প্রায় ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৭৫ টাকা করার পরিকল্পনা। এই মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হলে শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, কারণ ২০২৩ সালে গ্যাসের দাম ১৫০ শতাংশ বাড়ানোর পরও শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বর্তমান গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগটি এমন সময়ে এসেছে, যখন কারখানাগুলো গ্যাসের অপর্যাপ্ত চাপ এবং অনিশ্চয়তার কারণে আর্থিক লোকসানের শিকার। গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ এবং সাভারের শিল্পঘন এলাকায় গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন কমেছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। এতে উৎপাদন শিডিউল ও সরবরাহ চেইন বিপর্যস্ত হয়েছে, এবং পোশাক খাতে কাঁচামাল সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে, ফলে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা কমছে।

গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে পোশাক খাতে বছরে ৬,৩০০ কোটি টাকা এবং বস্ত্র শিল্পে ১১,৬৭৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে, যা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় শিল্পের সক্ষমতা হ্রাস করবে।

চিঠিতে বিনিয়োগ স্থবিরতার বিষয়ও তুলে ধরা হয়, যেখানে পোশাক শিল্পে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি ৮.৯৫ শতাংশ এবং বস্ত্র শিল্পে ১৮.১১ শতাংশ কমেছে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে এটি আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং মিল ও কারখানাগুলো সংকটে পড়বে। দেশের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ খাতে বিনিয়োগ প্রয়োজন, এবং এ ধরনের পদক্ষেপ বিনিয়োগ সহায়ক নয়।

বস্ত্র ও পোশাক খাতের অবদান উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, এই খাতটি শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, সামাজিক উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই, এ খাতের স্থিতিশীলতা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও খাত দুটি সংকটময় পরিস্থিতি পার করছে, এবং সংগঠনগুলো চিঠির সুপারিশগুলোর পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।