”সুন্দরবনে নৌকায় দুই মণ হরিণের মাংস ফেলে পালাল চোর শিকারিরা”

রাতের অন্ধকারে গহিন সুন্দরবনের বনে অবৈধভাবে হরিণ শিকার করে মাংস নিয়ে ফিরছিল শিকারিরা। তারা সুন্দরবনের খাল ধরে নৌকা দিয়ে লোকালয়ের দিকে এগোচ্ছিল। এমন সময় সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের বনরক্ষীরা তাদের হাতে ধরা পড়ে। বনরক্ষীদের দেখে শিকারিরা নৌকার মধ্যে রাখা মাংসের বস্তা ফেলে পালিয়ে যায়। পরে নৌকা থেকে তিনটি বস্তায় ৮০ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনা গত বুধবার রাতে সুন্দরবনের সত্যপীরের খাল এলাকায় ঘটেছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উদ্ধার হওয়া হরিণের মাংস আদালতে আনা হয়েছে এবং সেখানে আদালতের নির্দেশে মাংস মাটিতে পুঁতে ফেলা হচ্ছে। আদালত ভবনের পেছনে এক ব্যক্তি গর্ত খুঁড়ছিলেন, আর কিছু বনকর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা মো. সাদিকুজ্জামান জানান, গত রাতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন, চোরা শিকারিরা সুন্দরবন থেকে হরিণ শিকার করে মাংস নিয়ে লোকালয়ের দিকে আসছে। এরপর তিনি কয়েকজন বনরক্ষী নিয়ে অভিযান চালান। সাদিকুজ্জামান বলেন, “আমরা শাকবাড়িয়া নদী পেরিয়ে সত্যপীরের খাল এলাকায় পৌঁছালে একটি নৌকা দেখতে পাই। রাতে আবছা দেখতে পাওয়া দুজন নৌকায় বসে ছিল, আর অন্যরা নৌকার পাটাতনে বসে ছিল। আমাদের কাছে আসার আগেই তারা নৌকা ফেলে পালিয়ে যায়। আমরা তাদের পিছু নিলেও তারা গভীর জঙ্গলে ঢুকে যায়, তাই কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।”

সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, যারা বনে হরিণ শিকার করে, তারা সাধারণত মাছ ধরার জাল ও দড়ি নিয়ে জঙ্গলে যায়। সেখানে তারা হরিণ ধরার ফাঁদ তৈরি করে, এবং হরিণের যাতায়াতের পথে সেই ফাঁদ পেতে রাখে। শিকার শেষে তারা ফাঁদগুলো বস্তায় ভরে জঙ্গলে রেখে যায় অথবা মাটি খুঁড়ে পুঁতে ফেলে।

একটি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিকারি, যিনি আগে কারাগারে গেছেন, জানান, “যেখানে কেওড়াগাছ বেশি থাকে, সেখানেই হরিণের বিচরণও বেশি। সেখানে তারা ফাঁদ পেতে হরিণ ধরে। মাঝে মাঝে বন্য শূকরও ফাঁদে আটকা পড়ে, কিন্তু হরিণের মাংসের সঙ্গে সেই শূকরের মাংসও বিক্রি হয়।”

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান জানান, “বন্য প্রাণী শিকারে জড়িতদের তথ্য দেয়ার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা চালু হওয়ায় বর্তমানে চোরা শিকারিদের তথ্য পাওয়া সহজ হচ্ছে। এর ফলে বন্য প্রাণী শিকার কমেছে।” তিনি বলেন, “এ ঘটনায় কয়রা জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে জানানো হয়েছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।