গাজায় যুদ্ধবিরতি: ইসরায়েল নাকি হামাস—কোন পক্ষ জিতল, কোন পক্ষ হারল?

টানা ১৫ মাসের ভয়াবহ সংঘর্ষের পর, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। মধ্যস্থতাকারীরা জানিয়েছেন, এই যুদ্ধবিরতির আওতায় গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মি এবং ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার ব্যাপারে কিছু বলেননি। তবে, এই যুদ্ধবিরতি ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে চলমান স্মরণকালের অন্যতম রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সমাপ্তি হতে পারে। এই সংঘর্ষের প্রভাব ইসরায়েল-ফিলিস্তিন অঞ্চলের বাইরে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত হয়েছে এবং দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বকে আরও জটিল করে তুলেছে।

যুদ্ধে ইসরায়েল বেশ কিছু কৌশলগত সাফল্য দাবি করেছে, যেমন হামাসের শীর্ষ নেতাদের হত্যাকাণ্ড এবং ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে আক্রমণ। তবে, ইসরায়েল তার প্রধান দুটি লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। প্রথমত, হামাসকে নির্মূল করা এবং দ্বিতীয়ত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে আটক সমস্ত ইসরায়েলিদের ফেরত আনা।

যুদ্ধে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালালেও হামাস পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়নি। হামাস তাদের যোদ্ধা পুনরায় নিয়োগ করেছে এবং ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শক্তি ধরে রেখেছে। এমনকি কিছু বন্দি মুক্তি পেলেও, গাজায় অনেক জিম্মি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে।

ইসরায়েল তার “পবিত্র কর্তব্য” হিসেবে গাজায় অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি এবং দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবে, দেশটির অভ্যন্তরে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে হয়েছে।

এদিকে, ইসরায়েলের অভিযান এবং গাজায় হামাসের প্রতিরোধের ফলে পুরো বিশ্বে উত্তেজনা এবং সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচারালয় (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত করছে।

হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলা মূলত ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা এবং স্বাধীনতার বিষয়কে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে আনার লক্ষ্যে ছিল। গাজার জনগণ, বিশেষ করে নারী ও শিশু, ইসরায়েলি হামলায় বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যুদ্ধে ইসরায়েল দাবি করেছে যে তারা ১৭ হাজারেরও বেশি হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে, যদিও এর কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ১৯ লাখ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং তারা এখন মানবেতর পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করছে।

এত কিছুর পরও, হামাস নিজেকে শক্তিশালী সশস্ত্র সংগঠন হিসেবে টিকিয়ে রেখেছে এবং ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, যুদ্ধে হামাসের যোদ্ধা হারানো হলেও, তারা নতুন যোদ্ধা নিয়োগ করতে সক্ষম হয়েছে।

এখন, ইসরায়েলের জন্য এটি স্পষ্ট যে, হামাসকে নির্মূল করা সম্ভব নয়, এবং যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

গাজাযুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের স্রোত বয়ে গেছে। এর ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডেমোক্রেটিক পার্টিতে বিভক্তি দেখা দিয়েছে, যা নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয়ে ভূমিকা রেখেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।