বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নতুন রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের দাবি উঠেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে। তবে, ছাত্রদলসহ কয়েকটি সংগঠন গঠনতন্ত্র সংস্কারের দাবিও তুলেছে।
এই পরিস্থিতিতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনে একটি সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে, যা ২৫ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই কমিটি প্রথম বৈঠকটি ১ জানুয়ারি ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত করে এবং ২ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে সক্রিয় ২২টি ছাত্র সংগঠনকে গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য প্রস্তাব পাঠায়। প্রাথমিকভাবে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত মতামত দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল, তবে তা পরে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
কমিটিকে গতকাল (১৪ জানুয়ারি) পর্যন্ত সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছে ছাত্র ফেডারেশন, ইসলামী ছাত্র শিবিরসহ সাতটি ছাত্র সংগঠন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে প্রধানত, ডাকসুর গঠনতন্ত্রে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, ডাকসুর কার্যক্রম পরিচালনায় উপাচার্যের কোনো কার্যনির্বাহী ক্ষমতা না থাকার প্রস্তাব এসেছে। নির্বাচিত কমিটির সদস্যদের হাতে সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ও কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব থাকার কথাও প্রস্তাবিত হয়েছে। অন্যান্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে ডাকসু নির্বাচনের জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখের অন্তর্ভুক্তি এবং প্রার্থীদের বয়সসীমা পুনঃনির্ধারণের দাবি (বর্তমানে সর্বোচ্চ বয়স ৩০ বছর)।
ডাকসু নির্বাচনের জন্য গঠিত গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি এবং ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির প্রকৃতি নির্ধারণে গঠিত বিশেষ কমিটি এখন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতেই ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা প্রথম আলোকে জানান, সকল সংগঠনের মতামত একত্রিত করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে এবং দ্রুততম সময়ে উপাচার্যের কাছে জমা দেওয়া হবে।
এদিকে, ছাত্রদল এখনও গঠনতন্ত্র সংশোধন প্রস্তাব জমা দেয়নি, তবে তারা আগামী দিনে এই প্রস্তাব জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন।
২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছিল, যার মধ্যে ভোটে অনিয়ম এবং একতরফাভাবে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের প্রভাব থাকার অভিযোগ ছিল। ঐ নির্বাচনে ভিপি পদে জয়ী হন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থী নুরুল হক। ২০১৯ সালের পর থেকে ডাকসু নির্বাচন আর অনুষ্ঠিত হয়নি, ফলে ২০২৫ সালের পরিস্থিতিতে একটি নতুন নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নতুন দাবি উঠেছে, যার মধ্যে ছিল “দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ” এবং “ছাত্র সংসদ চালু” করার দাবি। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন মনে করছে, ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং দ্রুত নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই এই দাবিগুলি তুলে ধরেছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির প্রকৃতি এবং ধরন নিয়ে আলোচনা চলছে এবং বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে, ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে যাতে শিগগিরই ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হয়, তবে নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।