মরান খানের মুক্তির দাবিতে গত নভেম্বর মাসে রিচার্ড গ্রেনেলের দেওয়া একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার প্রথম মেয়াদে, পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে সে সময় তীব্র বিক্ষোভ চলছিল এবং ট্রাম্পের বিশ্বস্ত সহযোগী রিচার্ড গ্রেনেল তখন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তি দাবি করেন। গত নভেম্বর মাসে তিনি এ নিয়ে একটি পোস্ট দেন, যা সামাজিক যোগাযোগমা্মে ভাইরাল হয়ে যায়।
এছাড়া, আরেকটি টুইট বার্তায় গ্রেনেল লেখেন, “পাকিস্তানকে দেখুন, যেখানে ট্রাম্পের মতো একজন নেতা মিথ্যা মামলায় কারাগারে আছেন। যুক্তরাষ্ট্রের লাল ঢেউ (লাল রং রিপাবলিকান দলের প্রতীক) দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে পাকিস্তানের জনগণ প্রতিবাদ করছে। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক মামলা-মোকদ্দমা বন্ধ করতে হবে।” তবে পরবর্তীতে এই টুইটটি মুছে দেওয়া হয়।
গ্রেনেলের এই দুটি টুইট ব্যাপকভাবে দেখা হয়েছে। ৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জয়ের পর, ১৫ ডিসেম্বর, ট্রাম্প তাকে প্রেসিডেনশিয়াল দূত হিসেবে মনোনীত করেন। এর পরের দিন ১৬ ডিসেম্বর, গ্রেনেল আবারও ইমরান খানের মুক্তি দাবি করেন। ওই সময় তার পোস্টে ভিউয়ের সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়েছিল।
অনেক বিশ্লেষক প্রশ্ন তুলছেন, কেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠরা ইমরান খানের মুক্তির ব্যাপারে এতটা আগ্রহী। তারা এটিকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুক্তির জন্য একটি চাপের কৌশল হিসেবে দেখছেন। কিছু বিশ্লেষক একে পিটিআই দলের জন্য এক ধরণের ভাগ্যের পরিহাস হিসেবে উল্লেখ করছেন, কারণ মাত্র তিন বছর আগে দলটি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অভিযোগ তুলেছিল যে, ওয়াশিংটন ইমরান খানকে অপসারণে জড়িত ছিল।
গ্রেনেলের বার্তা রও ুরুত্ব পেয়েছে যখন রিপাবলিকান দলের নেতা ও ট্রাম্পের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ম্যাট গেটজও ইমরান খানের মুক্তির দাবি করেছেন। এক্স (প্রাক্তন টুইটার) এর এসব পোস্ট পিটিআই দলের পক্ষ থেকে সমর্থন বৃদ্ধি পাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। পিটিআই দলটি ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে নিজেদের নেতা ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
বিস্তারিত পর্যালোচনা থেকে বোঝা যায়, ই আগ্রহ পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের জটিলতা বৃদ্ধি করেছে। ২০২২ সালে ইমরান খানের সরকার পতনের পর তিনি অভিযোগ করেছিলেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করে যুক্তরাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল। তবে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই।
অপরদিকে, ২০২২ সালের এপ্রিলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে ইমরান খান সরকারের পতন ঘটে এব তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনা হয়। ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে তিনি কারাগারে বন্দী আছেন। এসময় বাইডেন প্রশাসন এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি, তবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ইমরান খানের সমর্থক পাকিস্তানি গোষ্ঠী তার মুক্তির জন্য মার্কিন রাজনীতিবিদদের মধ্যে জোর প্রচার চালাচ্ছে।
অপর দিকে, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্কের ধ্যে কিছুটা উন্নতি লক্ষ্য করা যায়, বিশেষ করে ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করার পর।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানি গোষ্ঠীগুলোর প্রচারণা ইমরান খানের মুক্তির জন্য দুই দেশের সম্পর্কের জটিলতা আরও বাড়িয়েছে। ২০২৩ সালে, এসব গোষ্ঠীর প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ‘পাকিস্তানে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ নিয়ে কটি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবশালী পাকিস্তানি গোষ্ঠীগুলোর প্রচারণা, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের জটিলতা বাড়িয়েছে। তবে ইসলামাবাদ এই মন্তব্যগুলোকে শুধুমাত্র “ব্যক্তিগত” মতামত হিসেবে দেখছে এবং জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী।