ইলন মাস্কের ‘চিপ’ মানুষের মস্তিষ্কে: প্রযুক্তির নতুন যুগ শুরু

মানুষের মস্তিষ্কে ইলেকট্রনিক চিপ বসানো হলো, যা নতুন প্রযুক্তির যুগের সূচনা করেছে। ইলন মাস্ক ঘোষণা করেছেন যে তার কোম্পানি নিউরালিংক থেকে ব্রেন চিপ পেয়ে প্রথম মানব রোগী এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বিলিয়নিয়ার মাস্ক বিশ্বাস করেন, এই ‘টেলিপ্যাথি’ নামক ডিভাইসটি শেষ পর্যন্ত বিশেষভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের, যেমন স্টিফেন হকিং, তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ পোস্ট করে মাস্ক জানিয়েছেন, একজনের মস্তিষ্কে চিপ বসানো হয়েছে এবং তিনি দ্রুত সুস্থ হচ্ছেন। প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফল আশাব্যঞ্জক, এবং চিপটি মস্তিষ্কের নিউরনের স্পাইকগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ অনুসারে, নিউরনের স্পাইকগুলি হল মস্তিষ্কের কার্যকলাপ, যা মস্তিষ্ক এবং শরীরের অন্যান্য অংশে তথ্য পাঠানোর জন্য বৈদ্যুতিক এবং রাসায়নিক সংকেত হিসেবে কাজ করে। মাস্ক বলেন, এই প্রযুক্তি আপনার ফোন বা কম্পিউটারসহ যেকোনো ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম করবে।

ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গত বছর নিউরালিংককে প্রথমবারের মতো মানুষের মস্তিষ্কে চিপ বসানোর পরীক্ষার অনুমোদন দেয়। এই চিপটি বিশেষভাবে পক্ষাঘাত এবং স্নায়ুবিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহায়তা করতে পারে। সেপ্টেম্বর মাসে, নিউরালিংক জানিয়েছে যে তারা মানবদেহে পরীক্ষামূলকভাবে ইমপ্লান্ট প্রয়োগের অনুমোদন পেয়েছে।

গবেষণায় রোবট ব্যবহার করে অস্ত্রোপচার করে মস্তিষ্কের বিশেষ অঞ্চলে ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (BCI) ইমপ্লান্ট স্থাপন করা হয়, যা মস্তিষ্ক ও কম্পিউটারের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করবে। এটি পারকিনসন্স এবং ALS এর মতো রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি বদলে দিতে পারে। এমনকি, মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে মানুষ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মধ্যে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে, যা তাদের একসঙ্গে বড় কিছু অর্জনে সহায়তা করবে। মাস্কের সংস্থার প্রাথমিক লক্ষ্য হলো পারকিনসন্সে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিন্তাভাবনার মাধ্যমে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করা।

নিউরালিংক জানিয়েছে, তার ‘অতি সূক্ষ্ম’ থ্রেডগুলো মস্তিষ্কের সংকেত প্রেরণে সহায়তা করে। তবে, কোম্পানির নিরাপত্তা প্রোটোকল সম্পর্কে প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি, মার্কিন পরিবহন বিভাগ (DOT) তাদের ‘বিপজ্জনক পদার্থ’ পরিচালনায় বিধি লঙ্ঘন করার জন্য নিউরালিংককে জরিমানা করেছে। এর আগে, পরীক্ষা চলাকালে কিছু বানরের মধ্যে পক্ষাঘাত, খিঁচুনি এবং মস্তিষ্কের ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেওয়ায়, চার রাজনীতিবিদ মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে তদন্তের জন্য আবেদন করেছেন। তবে, মাস্ক বলেছেন, নিউরালিংক ইমপ্লান্টের কারণে কোনও বানর মারা যায়নি।

মাস্কের মতে, এই চিপ প্রযুক্তি মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।