গাড়িচাপায় বুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যু: একমাত্র সন্তানের প্রয়াণে মায়ের অশ্রু থামছে না

এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সুখী সংসার গড়েছিলেন মাসুদ মিয়া ও রাইসা সুলতানা। ছেলে মুহতাসিম মাসুদ (২২) বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, আর মেয়ে ঢাকার একটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছিল। তাঁদের বাসা ছিল গ্রিনরোড এলাকায়। মা-বাবা দুজনই সন্তানদের পড়াশোনাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, অন্য দিনের মতোই, মোটরসাইকেল নিয়ে বুয়েটে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন ছেলে মুহতাসিম। রাতে সে ফিরে না আসায়, সাড়ে ১১টার দিকে তার মা তাকে ফোন করেন। মুহতাসিম জানান, সে বন্ধুদের সঙ্গে আছেন এবং রাতটা সেখানে কাটাবেন। কিন্তু পরদিন ভোরে দুর্ঘটনায় ছেলের মৃত্যুর খবর পান মা-বাবা। মা রাইসা সুলতানা এই দুঃখ সহ্য করতে পারছিলেন না।

মুহতাসিমের মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিকেল ৪:৩০ টায় অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রিনরোডের বাসায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে আত্মীয়-স্বজন ও সহপাঠীরা উপস্থিত ছিলেন। মুহতাসিমের মা রাইসা সুলতানা, যিনি ধ্বংসপ্রাপ্ত হৃদয়ে একমাত্র ছেলেকে শেষবারের মতো দেখতে অ্যাম্বুলেন্সে সামনে আসেন, কাপড় সরানোর পর কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্বজনদের সান্ত্বনা কোনোভাবেই তাকে শান্ত করতে পারছিল না। এরপর, মিরপুরের দিকে দাফনের জন্য লাশ নিয়ে রওনা দেন তাঁরা। সেসময় ছেলেকে শেষবিদায় দিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাইসা সুলতানা বলেন, “বাবা, তুমি শান্তিতে ঘুমাও, আবার আমাদের দেখা হবে।”

মুহতাসিমের মৃত্যুর খবর শোনার পর প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি মা। তিনি জানান, “গতকাল সন্ধ্যায় মুহতাসিম মোটরসাইকেল নিয়ে বুয়েটে গিয়েছিল, এবং আমাদের কথা ছিল রাত ১১টার মধ্যে বাড়ি ফিরবে। কিন্তু সে ফিরে না আসায় সাড়ে ১১টার দিকে ফোন দিই। সে বলেছিল, পুরান ঢাকায় বন্ধুদের সঙ্গে খাচ্ছে এবং রাতটা সেখানেই কাটাবে।”

স্বজনরা জানান, মুহতাসিম তার দুই বন্ধু কামরুল এবং মেহেদী হাসান খানের সঙ্গে পূর্বাচলে ঘুরতে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পথে তারা নীলা মার্কেট এলাকায় পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে থামানো হয়। এই সময় একটি বেপরোয়া প্রাইভেট কার তল্লাশিচৌকিতে দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়, এবং মুহতাসিম ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। অন্য দুই বন্ধু আহত হন।

এই ঘটনায় পুলিশ প্রাইভেট কারের চালক মুবিন আল মামুন (২০) এবং তার সঙ্গী মিরাজুল করিম (২২) ও আসিফ চৌধুরী (২২) কে গ্রেপ্তার করেছে। তারা তিনজনই শিক্ষার্থী। পুলিশের অনুসন্ধানে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। শুক্রবার ডোপ টেস্টের পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মুহতাসিমের বাবা মাসুদ মিয়া, যিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত, ছেলের মৃত্যুতে গভীর শোকাহত। তিনি জানান, “ছেলে মোটরসাইকেল থেকে নেমে কাগজপত্র বের করছিল যখন মদ্যপ অবস্থায় আসা প্রাইভেট কারটি তাকে চাপা দেয়। সাবেক সেনা কর্মকর্তার ছেলের কারণে আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে, আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।