মৃদু শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে পঞ্চগড়, তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রির ঘরে

উত্তরের ‘হিমালয় কন্যা’ পঞ্চগড়ে শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। গত দুদিন ধরে চলা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শীতকে আরও তীব্র করেছে। হাঁড়কাঁপানো শীতে এলাকাবাসী কাবু হয়ে পড়েছে। আজ শনিবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ভোর ৬টায় ছিল ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গতকাল শুক্রবার একই সময়ে তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে রেকর্ড হলে তা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে গণ্য করা হয়, জানিয়েছে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার।

স্থানীয়ভাবে দেখা গেছে, শনিবার কিছু সময়ের জন্য সূর্য উঠলেও হিমালয়ের শীতল বাতাসের কারণে তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে। গত শুক্রবার পঞ্চগড়ে এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল, যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও ছিল। এক সপ্তাহ ধরে পঞ্চগড় কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১১ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করেছে। দিনের বেলাতেও গরম কাপড় পরে বাইরে বের হতে হচ্ছে।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জীতেন্দ্রনাথ রায় জানিয়েছেন, শনিবার সকাল ৯টায় ৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঘনকুয়াশা না থাকায় হিমালয়ের শীতল বাতাস সরাসরি প্রবাহিত হওয়ায় তাপমাত্রা কমেছে। বর্তমানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে এবং শীত আরও বাড়লে তাপমাত্রা আরও নিচে নেমে যেতে পারে।

শীতের কারণে অসহায় মানুষদের দুর্ভোগ বেড়েছে। দিনমজুর, কৃষি শ্রমিক, চা শ্রমিক, পাথর শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। গরম কাপড়ের অভাবে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

শহরের অটোচালক শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘‘কুয়াশা আর শীতের বাতাসে গাড়ি চালানো সম্ভব হচ্ছে না, ফলে আয় কমেছে।’’

চা শ্রমিক মরজিনা খাতুন জানান, ‘‘ঘনকুয়াশায় চা গাছ ভিজে যায়, ফলে পাতা তুলতে কষ্ট হয়, হাত-পা অবশ হয়ে যায়।’’

এদিকে কৃষি ক্ষেত্রে ঘনকুয়াশা প্রয়োজনীয় বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন। তিনি বলেন, ‘‘এটি আলু, গম, ভুট্টা চাষে সহায়ক।’’

হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে রোগীর চাপ বেড়ে গেছে। সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে আসছেন। বিশেষত, শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি অসুস্থ হচ্ছেন।

পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘শীতের প্রকোপ বাড়লে হাসপাতালে রোগী ভর্তির হার বেড়ে যায় এবং আমরা চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি।’’

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী জানিয়েছেন, ‘‘সরকারি কম্বল বিতরণের জন্য ২,০০০ কম্বল বরাদ্দ পেয়েছি এবং এগুলো উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।’’ শীতার্তদের সাহায্যার্থে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।