রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকার পতন এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের অর্ডারের একটি বড় অংশ প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন বাজারে চলে গেছে, যা উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এ পরিস্থিতি দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাতের জন্য একটি বড় সংকট হিসেবে দেখা হচ্ছে। এক মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান জানায়, সময়মতো শিপমেন্ট করতে না পারার ফলে তাদের একটি বড় ক্রেতার ৯০ শতাংশ অর্ডার ভারতে চলে গেছে।
‘নো এক্সিট’ নামক প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ জাকির বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্রেতারা ফিরতে পারেন। তার নিজের অর্ডারও ভারত চলে গেছে শিপমেন্ট ও ডেলিভারি সমস্যা থাকার কারণে।
বাংলাদেশের বড় পোশাক কারখানা গড়ে উঠেছে আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুরে, যেখানে শ্রমিক অসন্তোষ সবচেয়ে বেশি। এক পর্যায়ে যৌথবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এক শ্রমিক নিহত হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এটি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, গত ১২-১৫ দিন অনেক কারখানা বন্ধ ছিল। কোনো কোনো কারখানা দুপুরের পরও চালানো যায়নি, যা অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, অন্তত ২৫-৩০ শতাংশ অর্ডার ডিসেম্বরের মধ্যে চলে যাবে।
শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে রয়েছে ঝুট ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব, মালিকানার সমস্যা, বকেয়া পাওনা এবং শ্রমিকদের নতুন দাবি। আশুলিয়ায় শ্রমিক সংগঠন নেতারা বলেন, শ্রমিকরা নানা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে, বিশেষ করে নারী-পুরুষের সমান চাকরির দাবিতে।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম আক্তার মনে করেন, বহিরাগতরা শ্রমিক অসন্তোষে প্ররোচনা দিচ্ছে। কিছু ব্যবসায়ীও এর পেছনে ভূমিকা রাখছে। বিজিএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব জানান, পরিস্থিতি খারাপ হলেও এখন অনেক কিছুই উন্নতি হয়েছে এবং কাস্টমারের বিশ্বাস ফিরে আসবে।
সরকারের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে শিল্প পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয় খতিয়ে দেখতে হবে। বর্তমানে, শ্রমিক অসন্তোষের ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, যদি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হয়, তবে তা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং মজুরি কাঠামোর বাস্তবায়ন জরুরি, যাতে তৈরি পোশাক রপ্তানির স্থিতিশীলতা বজায় থাকে এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর প্রয়াসে সহায়ক হয়।