পশ্চিম ইরাকের আনবার প্রদেশে ১৭ বছর বয়সী হুদার (ছদ্মনাম) জীবনের কাহিনি
পশ্চিম ইরাকের আনবার প্রদেশের একটি দরিদ্র পরিবারে ছোট দুই ভাই-বোনের সঙ্গে বসবাস করছিল ১৭ বছর বয়সী হুদা। একদিন তার মা তাকে একটি বিয়ের প্রস্তাব দেন, যা তার কাছ থেকে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এলাকার একজন ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব আসে এবং এর পরেই হুদার জীবন সম্পূর্ণ বদলে যায়।
হুদার আগে আইনের ছাত্র হওয়ার স্বপ্ন ছিল। বিয়ের পর তাকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তার মা বলেছিলেন, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে নিজের মেয়ের মতোই রাখবে। কিন্তু বিয়ের পর সব কিছু পাল্টে যায়। হুদা জানায়, “শাশুড়ি আমাকে বলেন, তার মেয়েরা পড়াশোনা করছে, তাই আমি বাড়ির কাজে সাহায্য করার জন্য দরকার।”
২০২১ সালে হুদার বিয়ে হয় এবং এক বছর পর তার সংসার ভেঙে যায়। এই এক বছরে তাকে মারধর ও অপমানিত হতে হয়। শেষ পর্যন্ত স্বামী তাকে তালাক দেন, ফলে হুদা আবার তার পরিবারের কাছে ফিরে আসেন।
ইরাকের আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ হলেও বাস্তবে বিষয়টি ভিন্ন। জাতিসংঘের এক জরিপে দেখা গেছে, ইরাকে ২৮% মেয়ে ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে করে ফেলে। এমনকি, বাল্যবিবাহ রোধে আইন কঠোর করার পরিবর্তে বর্তমানে আইন শিথিল করার প্রক্রিয়া চলছে। ইরাকের পার্লামেন্টে নতুন একটি আইন চূড়ান্ত ভোটের অপেক্ষায় রয়েছে, যেখানে ৯ বছর বয়সেও বিয়ের অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
আনবারের নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সোকিয়া ফাউন্ডেশনের প্রধান কাওতহার আল-মোহাম্মদি বলেন, “অধিকাংশ কিশোরী মনে করে, বিয়েতে তারা সাদা পোশাক, মেকআপ এবং ফ্রিজভর্তি মিষ্টি পাবে। অনেক সময় মা-বাবার চাপ ছাড়াও তারা বিয়েতে রাজি হয়ে যায়, যা বাস্তবে এক বড় ধাক্কা হয়।”
আল-দিয়ানিয়ার মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক আলী আজিজ বলেন, “ইরাক এখন তালেবান বা আফগানিস্তান সংস্করণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।” তিনি আরও জানান, “ইরাকে অনেক মেয়েকে জোর করে বা ধনসম্পদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিয়েতে প্রলুব্ধ করা হয়। অনেক বাবা-মা মেয়েকে বোঝা মনে করে তাদের বিয়ে দিয়ে দেয়। মেয়েদের বলাহয়, তোমার মুঠোফোন হবে, মেকআপ করতে পারবে, বাইরে যেতে পারবে এবং গয়না কিনতে পারবে। এইভাবে তাদের প্রলুব্ধ করে অনেক মেয়েকে স্কুল ছেড়ে বিয়ে করতে রাজি করানো হয়।”