“১৫ বছরে বিচার ছাড়া ১৯২৬ জনের হত্যার অভিযোগ আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে”


সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অলিউল্লাহ মোল্লা ২০১৬ সালের ১০ জুলাই পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন। তার পরিবার জানায়, ওই দিন বিকেলে অলিউল্লাহকে বাড়ি থেকে তুলে নেয় পুলিশ, যেখানে তাদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। পরদিন সকালে অলিউল্লাহর মৃত্যুর খবর পায় তার পরিবার।


যে কোন ধরণের ওয়েবসাইট তৈরি করতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
৫০% পর্যন্ত ডিসকাউন্টে তৈরি করুন আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য
কর্পােরেট ওয়েবসাইট
ই-কমার্স ওয়েবসাইট অথবা নিউজপোর্টাল  ওয়েবসাইট।

পুলিশ দাবি করে, ঘটনার দিন রাত সাড়ে তিনটার দিকে অলিউল্লাহকে থামার সংকেত দিলে তিনি পুলিশের দিকে বোমা ও গুলি ছুঁড়েন, যার পাল্টা গুলিতে তার মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ এই ঘটনাকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হিসেবে উল্লেখ করে অলিউল্লাহকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে চিহ্নিত করে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে অন্তত ১,৯২৬ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন, যা বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী।


**পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন বলেন, “আমরা বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কারের প্রস্তাব দিতে চাই যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।” সরকার প্রায় প্রতিটি হত্যার পর একই ধরনের বর্ণনা প্রদান করেছে, অথচ বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। **

২০১৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ‘ক্রসফায়ার’ সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ করেছে। ওই সময়ে ১,২৯৩ জন নিহত হয়েছেন। এক্ষেত্রে আসকের হিসাবও উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হত্যা ঘটনার পর মামলা দেয়, যেখানে নিহত ব্যক্তির সহযোগীদেরও আসামি করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারগুলো মামলা করার সাহস পায় না।

অলিউল্লাহর হত্যার পর তার স্ত্রী সালিমা বলেন, “আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে মারা হয়। আমাদের মামলা করতে নিষেধ করা হয়।” ২৮ আগস্ট তিনি সাতক্ষীরার আদালতে মামলা করেছেন।

ক্রসফায়ারের ইতিহাস বাংলাদেশে পুরোনো। ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা শুরু হয়। র‌্যাব গঠনের পর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলে ক্রসফায়ারের সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।


সরকারের পক্ষ থেকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানালেও সরকার এ বিষয়গুলো আমলে নেয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বেড়ে গেছে, যা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

অন্যদিকে, নিহতদের পরিচয়ে ‘সন্ত্রাসী’, ‘মাদক ব্যবসায়ী’ এবং ‘ডাকাত’ উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে অনেকেই রাজনৈতিক কর্মী। ২০১৭ সালের পর থেকে পুলিশ নিহতদের রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা বন্ধ করে দিয়েছে।

ক্রসফায়ারের ঘটনা রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ঘটছে এবং এতে বহু নিরীহ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০১৮ সালে টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুল হকের হত্যাকাণ্ড এ বিষয়ে নজিরবিহীন।

মোটকথা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা প্রয়োজন এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

4o mini

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।