ঈদের বাজারে পোশাক বেচাকেনার তুঙ্গে, তবে দেশীয় পোশাকের সঙ্গে অবৈধ আমদানি নিয়ে সমস্যা
ঈদ উপলক্ষে দেশে পোশাকের বেচাকেনা এখন তুঙ্গে পৌঁছেছে। তবে, বাজারে দেশীয় পোশাকের প্রাধান্য থাকলেও, এক দশকে বড় উদ্যোক্তারা নিজেদের ব্র্যান্ড তৈরি করলেও, ক্রেতাদের চাহিদার কারণে প্রতিবছর ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তান থেকেও পোশাকের আমদানি বাড়ে।
ঈদের বাজারে যেখানে ভারত ও পাকিস্তানের পোশাকের বিক্রি হয়ে থাকে, সেখানে বৈধভাবে আমদানি খুবই কম। মূলত ভারত থেকে অবৈধপথে বিপুল পরিমাণ পোশাক আনা হয়, এবং পাকিস্তান থেকেও লাগেজে পোশাক আসছে।
অবৈধপথে পোশাক আমদানির সঠিক পরিমাণ জানা না গেলেও, বৈধপথে পোশাক আমদানির হিসাব পাওয়া গেছে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই দুটি দেশ থেকে পোশাক আমদানি করে থাকে, এবং রপ্তানিমুখী পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো স্যাম্পল হিসেবেও পোশাক আমদানি করে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে (ডিসেম্বর–ফেব্রুয়ারি) ভারত ও পাকিস্তান থেকে ২২ লাখ ৩৫ হাজার পিস পোশাক আমদানি হয়েছে, যা গত রোজার আগে একই সময়ের তুলনায় কিছুটা কম।
ভারত থেকে পোশাক আমদানি
ভারত থেকে গত তিন মাসে ১৩ লাখ ২৯ হাজার পিস পোশাক আমদানি হয়েছে, যার শুল্কায়িত মূল্য ৪৫ কোটি টাকা। গতবারের তুলনায় এই পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ পিস কম। এর মধ্যে থ্রি-পিসের আমদানি ছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার পিস, যা গত রোজার আগের সময়ের তুলনায় কম। এই পোশাকের গড় আমদানি মূল্য ৩.০৮ ডলার বা ৩৭৭ টাকা, এবং শুল্ক-কর সহ প্রতি পিসের মূল্য দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১০৫ টাকা।
ভারত থেকে এবার লেহেঙ্গা এবং শাড়ির আমদানি বেড়েছে। লেহেঙ্গা আমদানি হয়েছে ৫ হাজার ২৯৭ পিস, যার গড় আমদানি মূল্য ১৭ ডলার, এবং শুল্ক-করসহ প্রতি পিসের খরচ পড়েছে ৬ হাজার ৪০৬ টাকা। শাড়ির আমদানি গতবারের তুলনায় ১০ হাজার পিস বেড়ে ১ লাখ ২৮ হাজার পিস হয়েছে।
পাকিস্তান থেকে পোশাক আমদানি
পাকিস্তান থেকে ৯ লাখ পিস পোশাক আমদানি হয়েছে, যার শুল্কায়িত মূল্য ৫২ কোটি টাকা। গতবারের তুলনায় এই পরিমাণ প্রায় ৯২ হাজার পিস বেশি। পাকিস্তান থেকে আমদানি হওয়া পোশাকের ৯৭% মেয়েদের পোশাক, বিশেষ করে থ্রি-পিস, টু-পিস ও ওয়ান-পিস।
থ্রি-পিস আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা ১ থেকে ১০ ডলার মূল্য ঘোষণা করলেও, কাস্টমস এ দরকে অবিশ্বাস্য বলে উল্লেখ করে তিন থেকে চার গুণ বেশি মূল্য ধরে শুল্কায়ন করেছে। ফলে, প্রতি পিস থ্রি-পিসের শুল্ক-কর ৬৩১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অবৈধ পথে আমদানি: এক বড় সমস্যা
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ, এবং দেশীয় পোশাক খাতও উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। তবে, দেশে পোশাকের বড় বড় ব্র্যান্ড গড়ে ওঠার পরও, ভারত ও পাকিস্তান থেকে অবৈধভাবে আমদানির কারণে দেশীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে সুরক্ষা দিতে পোশাক আমদানিতে উচ্চ শুল্ক-কর আরোপ করা হলেও, অবৈধ পথে আনা পোশাকের কারণে রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ট্যারিফ কমিশন অবৈধ আমদানি বন্ধের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। তারা তৈরি পোশাকের আমদানির সব চালান পরীক্ষা করার সুপারিশ করেছে, যাতে বৈধভাবে আমদানি হওয়া পোশাকের পরিমাণ বাড়ানো যায় এবং চোরাচালান বন্ধ হয়।
দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রতিবাদ
রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাশ জানান, ভারত-পাকিস্তান থেকে অবৈধভাবে পোশাক আসার কারণে দেশীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ব্যবসার খরচও বেড়েছে, এবং ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, অবৈধ আমদানি বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেওয়া হোক, যা দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা করবে এবং রাজস্ব বৃদ্ধি করবে।