“পলওয়েল মার্কেটের জৌলুশ এখনও অটুট”

১৯৭০ সালের দশকে ঢাকার পল্টনের পলওয়েল সুপার মার্কেট ছিল বিলাসী ইলেকট্রনিকস ও প্রসাধনসামগ্রীর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ব্যাগসের রুলস অনুযায়ী, বিদেশ থেকে আনা এসব পণ্য এখানে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করা হত। কিন্তু গুলিস্তানে স্টেডিয়াম মার্কেট চালু হওয়ার পর পলওয়েলের ইলেকট্রনিকসের ব্যবসায় পতন ঘটে। এরপর, মার্কেটটির ব্যবসার ধরন বদলানো শুরু হয়।

ইলেকট্রনিক সামগ্রীগুলো জায়গা নিলো বিদেশি পোশাক, জুতো, বেল্ট, কেডসসহ নানা সামগ্রী, যা বেশিরভাগই চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত, কোরিয়া, ইংল্যান্ড, ইতালি ও অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হত। এর ফলে পলওয়েল মার্কেট বিদেশি পণ্যের জন্য এক আলাদা পরিচিতি পায়।

১৯৬৬ সালে, একতলা ভবনে ৩৩টি দোকান নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল পলওয়েল মার্কেট। এর মালিকানায় ছিল বাংলাদেশ পুলিশ কো-অপারেটিভ সোসাইটি, তাই এটি পুলিশের মার্কেট হিসেবেও পরিচিত ছিল। পুলিশ সম্পর্কিত বিভিন্ন পণ্য এখানে পাওয়া যেত।

মার্কেটটি সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে। ১৯৮৮ সালে এটি ছয়তলা হয়ে ওঠে এবং দোকানের সংখ্যা বেড়ে ৩৩ থেকে ৩৬৫-এ পৌঁছায়। নব্বইয়ের দশকে, যখন এই মার্কেটের ব্যবসা তুঙ্গে ছিল, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারি পণ্য কিনতে এখানে আসতেন। ২০১০ সালের পর, দেশে পণ্য আমদানি সহজ হয়ে যাওয়ার ফলে পলওয়েলের একচেটিয়া ব্যবসায় কিছুটা ধস নামে। তবে এখনো পুরোপুরি তার জনপ্রিয়তা হারায়নি।

পলওয়েল সুপার মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম জানান, যদিও ব্যবসা কমেছে, তবে পুরোপুরি জৌলুশ হারায়নি। এখানে এখনো দেশের চামড়াজাত বেল্টের ৭০% চাহিদা পূরণ হয়।

নব্বইয়ের দশকে, যখন মার্কেটে রমরমা ব্যবসা ছিল, তখন একেকটি আমদানিকারক প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কনটেইনার পণ্য আমদানি করতেন। কিন্তু বর্তমানে, সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১ থেকে ২ কনটেইনারে। এখন পলওয়েল মার্কেটের ১৫-২০ জন আমদানিকারক বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে, যা দোকানিরা পাইকারি ও খুচরায় বিক্রি করেন।

একসময় পলওয়েল মার্কেট দৈনিক ১০-১৫ হাজার গ্রাহককে আকর্ষণ করতো, তবে বর্তমানে সেই সংখ্যা ৪-৫ হাজারে নেমেছে। এবারের ঈদ বাজারও খুব জমে উঠেনি। পলওয়েল মার্কেটের ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, “রাজধানীর নামীদামি ব্র্যান্ডের দোকান থেকে যে টি-শার্ট ১,৮০০ থেকে ২,০০০ টাকায় বিক্রি হয়, সেটা এখান থেকে ১,২০০ টাকায় পাওয়া যায়।”

দোকানিরা জানান, রমজানের শেষে ভালো ব্যবসার আশা করছেন। সুপ্তি ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী শরিফ হোসেন বলেন, “একসময় ঈদে ২-৩ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছি, এখন সেটি ৩০-৪০ হাজারে নেমেছে।”

এছাড়া, পলওয়েল মার্কেটে বিদেশি ব্র্যান্ডের জুতা বিক্রি হয়, যার মধ্যে রয়েছে থাইল্যান্ডের গ্যাম্বল ও কোরিয়ার কে টু ব্র্যান্ডের জুতা, যার দাম ১,০০০ থেকে ৪,০০০ টাকা পর্যন্ত। রকল্যান্ড নামক দোকানে নাইকি ও অ্যাডিডাসের রেপ্লিকা জুতাও পাওয়া যায়। দোকানের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, “রেপ্লিকা জুতাগুলো ফার্স্ট কপি, তাই মান বেশ ভালো।”

এভাবে, সময়ের সাথে সাথে পলওয়েল মার্কেটের ব্যবসার ধরন ও পরিসর পাল্টেছে, তবে এখনও এটি রাজধানীর এক পরিচিত মার্কেট হিসেবেই টিকে রয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।