“ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে তোফাজ্জল নিহতের ২২৯ দিন পর মামলা, পরিবারের অজানা”

ময়মনসিংহের ভালুকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ২২ বছর বয়সী শ্রমিক তোফাজ্জল হোসেনকে (২২) কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২২৯ দিন পর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার (২১ মার্চ) ভালুকা থানায় শরিফ নামে এক ব্যক্তি মামলাটি দায়ের করেন, যিনি নিজেকে তোফাজ্জলের ‘সহযোদ্ধা’ দাবি করেছেন। মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ২৪৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

তোফাজ্জল নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পিজাহাতি গ্রামের মৃত আবদুর রশিদের ছেলে। তবে তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগর হাওলা এলাকায় মা ও ছোট ভাইয়ের সাথে বসবাস করতেন এবং রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। মামলার বাদী শরিফ ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের মাটির মসজিদ এলাকার বাসিন্দা।

মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, গত বছরের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনের এক মিছিলে যোগ দেন তোফাজ্জল। ওইদিন সন্ধ্যায় শ্রীপুরের জৈনা বাজার থেকে একটি মিছিল ভালুকার মাস্টারবাড়ি এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা মিছিলটি প্রতিহত করেন। মিছিলটি ভেঙে গেলে তোফাজ্জলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। তাকে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে এবং পরে শ্রীপুরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময়ে ৬ আগস্ট কেন্দুয়ার নিজ বাড়িতে তাঁকে দাফন করা হয়।

ঘটনার প্রায় সাত মাস পর, তোফাজ্জলের পরিবার মামলা করতে সম্মত হয়নি। তাঁরা শ্রীপুর থেকে কেন্দুয়ায় চলে গেছেন। তবে তোফাজ্জলের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কিছুদিন ধরে আন্দোলনকারী গ্রুপরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে, তোফাজ্জলের ছোট ভাই মোফাজ্জল হোসেন জানান, “মামলা সম্পর্কে আমি জানি না, বাদীকেও চিনি না।” তিনি আরও বলেন, “আমরা গরিব মানুষ, আমাদের লোকজন নেই, তাই মামলা করিনি। আমরা তো দেখিনি কে মারছে।” তোফাজ্জলের শরীরে আঘাতের বিষয়ে তিনি জানান, “লাশ বাড়িতে আনার পর দেখেছি, ভাইয়ের শরীরে কোপের আঘাত বেশি ছিল। পায়ে বেশি ছিল, এছাড়া শরীরের অন্যান্য জায়গাতেও আঘাতের চিহ্ন ছিল।”

মামলার বাদী শরিফের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও, তাঁর মুঠোফোন বন্ধ ছিল। তবে মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, “আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলাম এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম। তোফাজ্জলের মা ও পরিবার অত্যন্ত গরিব, তারা মামলা করতে সাহস পাচ্ছিলেন না। তাই আমি ন্যায়বিচারের স্বার্থে বাদী হয়েছি।”

ভালুকা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ূন কবীর জানান, “তোফাজ্জল হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা করার জন্য আমরা অনেকবার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু তারা মামলা করতে সম্মত হয়নি। গতকাল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী একজন বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এখন বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।