পবিত্র ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদে অপরিহার্য অনুষঙ্গ সেমাই
প্রতিবছর রমজান মাসে সেমাই তৈরির জন্য কুমিল্লার সেমাই শিল্পের প্রতি বিশেষ মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। কুমিল্লার আশোকতলা এলাকায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্পনগরী স্থাপন হওয়ার পর থেকে এখানে প্রায় চার দশক ধরে সেমাই উৎপাদন হচ্ছে। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে কুমিল্লার বিসিক শিল্পনগরীর ছয়টি কারখানায় সেমাই তৈরির কাজে ব্যাপক জোর দেওয়া হয়েছে। শিল্পনগরীর কর্মকর্তাদের মতে, ঈদ উপলক্ষে সেমাইয়ের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার কারণে উৎপাদনও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
কুমিল্লা বিসিক কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এখানে উৎপাদিত সেমাইতে কোনো রাসায়নিক বা কৃত্রিম রঙ ব্যবহার করা হয় না। এটি বাজারে কম দামে এবং ভালো মানে বিক্রি হওয়ায় সেমাইয়ের চাহিদা কুমিল্লা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে।
সেটা প্রমাণিত হয় সরেজমিনে বিসিকের সেমাই কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে। সেখানে দেখা গেছে, দুটি প্রধান ধরণের সেমাই তৈরি হচ্ছে— বাংলা এবং লাচ্ছা। তবে সবচেয়ে বেশি তৈরি হচ্ছে বাংলা চিকন সেমাই। কুমিল্লা ফ্লাওয়ার মিলস এবং খন্দকার ফুড কারখানা এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান সেমাই উৎপাদক। এছাড়া রিয়াজ ফ্লাওয়ার মিলস, মক্কা কনজ্যুমার অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টসসহ আরও কিছু কারখানায় সেমাই উৎপাদিত হচ্ছে।
কুমিল্লা ফ্লাওয়ার মিলসে গিয়ে দেখা গেল, কারখানার কর্মীরা ব্যস্তভাবে সেমাই তৈরির কাজ করছেন। প্রথমে মেশিনে উপকরণ মিশিয়ে ময়দা দিয়ে সেমাই তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর কাঁচা সেমাই কারখানার ছাদে শুকানো হয়। শুকানোর পর, সেমাই লাকড়ির চুলায় ভাজা হয়। এরপর নারীরা এসব সেমাই হাতে প্যাকেট করে কার্টনে সজ্জিত করেন। প্রতি কার্টনে ২৪টি প্যাকেট থাকে, প্রতিটি প্যাকেটের ওজন ২০০ গ্রাম। সেমাইয়ের এই কার্টনগুলোর দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়।
ফ্লাওয়ার মিলসের কর্মী সুমাইয়া আক্তার বলেন, “ঈদে সেমাই তৈরির কাজ বেশি থাকে, তাই আমরা দ্রুত প্যাকেটজাত করছি। একজন শ্রমিক ঘণ্টায় ২০০ থেকে ৩০০ প্যাকেট প্রস্তুত করতে সক্ষম। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করার চেষ্টা করছি।”
ফজলে রাব্বী, যিনি তিন বছরের বেশি সময় ধরে লাকড়ির চুলায় সেমাই ভাজেন, বলেন, “লাকড়ির আগুনে সেমাই ভাজলে তার স্বাদ খুব ভালো থাকে। ঈদের সময় এই কাজ অনেক ব্যস্ততার হয়।”
কুমিল্লা ফ্লাওয়ার মিলসের বিপণন কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জানান, “বিসিকের সেমাইয়ের চাহিদা কুমিল্লা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা যেমন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালীসহ দেশব্যাপী রয়েছে।”
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সৈয়দ ইবনুল কাদের জানান, “আমরা বছরে সেমাই উৎপাদন করি না, শুধুমাত্র ঈদের সময় চিকন বাংলা সেমাই উৎপাদন করি। আমাদের সেমাই তৈরিতে কোনো রাসায়নিক বা রং ব্যবহার করা হয় না। প্রায় ৪০ বছর ধরে মান বজায় রেখে আমরা সেমাই তৈরি করছি, এবং সীমিত লাভে বিক্রি করি যাতে এটি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে।”
এছাড়া, বিসিকের একটি কারখানা থেকে সেমাই কিনতে আসা লাকসামের পাইকারি ব্যবসায়ী আজিজুল হক বলেন, “বিসিকের সেমাই অনেক সাশ্রয়ী এবং মানও ভালো, তাই বাজারে চাহিদা রয়েছে।”
কুমিল্লা বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক মো. মুনতাসীর মামুন জানান, “আমাদের সেমাই তৈরিতে কোনো রাসায়নিক বা রং ব্যবহার করা হয় না, এবং আমরা নিয়মিত তদারকি করি। এ কারণে আমাদের সেমাই বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতা পায়, এবং একদিন হয়তো এই সেমাই বিদেশেও রপ্তানি হবে।”