ইসরায়েল স্বৈরতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে—এ কথা বলেছেন ৫৯ বছর বয়সী রিনাত হাতাশি, যিনি গতকাল শুক্রবার জেরুজালেমে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “সরকার জিম্মিদের পাশে নেই এবং দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উপেক্ষা করছে।” গতকাল”ইসরায়েলবিরোধী ব্যাপক প্রতিবাদ”
গাজায় যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখা, হামাসের হাতে বন্দী থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্তি এবং ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করার প্রতিবাদে ইসরায়েলে গত কয়েকদিন ধরে হাজার হাজার নাগরিক বিক্ষোভ করছে। এই বিক্ষোভের মূল লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা, বিশেষত বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে।
গতকাল জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভকারীরা সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় এবং হাতে ইসরায়েলের পতাকা ও সরকারবিরোধী প্ল্যাকার্ড বহন করে। পশ্চিম জেরুজালেমে মাইকেল হালপেরিন নামক এক বিক্ষোভকারী বলেন, “শিন বেতের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী এখন গাজায় মৃত্যুর মুখে থাকা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার দিকে মনোযোগ দিন।”
এছাড়া, বুধবার এবং বৃহস্পতিবারও জেরুজালেম ও তেল আবিবে বড় আকারে বিক্ষোভ হয়, যার মধ্যে পুলিশ অন্তত ১২ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার জেরুজালেমে হাজার হাজার মানুষ নেতানিয়াহুর বাসভবনের কাছাকাছি অবস্থান নেয় এবং স্লোগান দেয়, “এখনই জিম্মি মুক্তির চুক্তি করুন।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের দুই শতাধিক নাগরিককে গাজায় বন্দী করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে কয়েক দফায় কিছু জিম্মি মুক্তি পেয়েছে। গত ১৯ জানুয়ারি প্রথম যুদ্ধবিরতির সময় ৩৮ জন মুক্তি পায়, কিন্তু বাকিদের মুক্তি পরবর্তী যুদ্ধবিরতির ধাপে আসার কথা ছিল। তবে মঙ্গলবার ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে আবার গাজায় হামলা শুরু করে, যার ফলে ৫৯০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শতাধিক শিশু রয়েছে।
গাজায় চলমান হামলার প্রতিবাদে গতকাল বাংলাদেশের পাশাপাশি পাকিস্তান, ইরাক, জর্ডান ও ইন্দোনেশিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। পাকিস্তানে জামায়াত-ই-ইসলামি দলের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ঘেরাও করে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকায় আগুন দেয়। একইভাবে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ যেমন জর্ডান, ইরাক এবং ইন্দোনেশিয়ায়ও বিক্ষোভ হয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গাজায় নতুন করে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি কাতারের আমিরের সঙ্গে এক ফোনালাপে বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়া ও কাতার একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।” যুক্তরাজ্যও ইসরায়েলের হামলায় শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে।
ইসরায়েল গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ১ মার্চ শেষ হওয়া প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির পর থেকেই নতুন করে হামলা শুরু হয়েছে। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর পরেও ইসরায়েল সেই প্রতিশ্রুতি ভেঙে হামলা শুরু করে। গাজা শহর, খান ইউনিস এবং রাফা এলাকায় ব্যাপক হামলা চালানো হচ্ছে, যার ফলে অনেক ফিলিস্তিনি পালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, গাজায় একটি ক্যানসার হাসপাতালও ইসরায়েলের হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে, যা প্রতি বছর ১০ হাজার ক্যানসার রোগীকে চিকিৎসা দিত। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ইসরায়েল উপত্যকায় যুদ্ধাপরাধ করছে এবং ফিলিস্তিনিদের জীবন আরো ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
যুদ্ধবিরতির আলোচনা নিয়ে বিতর্ক চললেও, হামাস দাবি করেছে যে তারা আলোচনায় রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব বিবেচনা করছে। তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, হামাস যুদ্ধবিরতি আলোচনা স্থগিত করেছে।