“১৯ দিনে প্রবাসী আয় দুই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে”

ঈদের আগে বৈধ পথে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রেরণ তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। ফলস্বরূপ, এই রমজান মাসে প্রবাসী আয় নতুন একটি রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। চলতি মাসের প্রথম ১৯ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেল বা বৈধ পথে দেশের ভিতরে ২২৫ কোটি মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় প্রবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে, ১৯ মার্চ একদিনেই এসেছে ১৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

যদি বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে চলতি মাসের শেষে প্রবাসী আয় ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে, এমন আশা করছেন ব্যাংকাররা। প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে ডলারের সংকট অনেকটাই কেটে গেছে এবং ডলারের দাম নিয়ে যে অস্থিরতা ছিল, তা এখন অনেকটা স্থিতিশীল। বর্তমানে, ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশিত সর্বোচ্চ ১২৩ টাকা দরে প্রবাসী আয় কিনছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবাসী আয় বেড়েছে। যেমন, প্রথম সপ্তাহে ব্যাংকের মাধ্যমে ৮১ কোটি ডলার এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে ৮৫ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। প্রথম ১৫ দিনে প্রবাসী আয় ছিল ১৬৬ কোটি ডলার, এবং পরবর্তী ৪ দিনে এসেছে ৫৯ কোটি ডলার।

২০২৪ সালের জুলাই থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত প্রবাসী আয় মোট ২ হাজার ৭৪ কোটি ডলার হয়েছে, যা ২০২৩–২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি।

প্রবাসী আয় সাধারণত ঈদের সময় সবচেয়ে বেশি আসে, এবং গত বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে পাঁচ দিনে ৪৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল, অর্থাৎ গড়ে দিনে ৯ কোটি ডলার। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ১১ কোটি এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ে ১২ কোটি ডলার করে এসেছে। পরবর্তী চার দিনে, প্রবাসীরা গড়ে প্রায় ১৫ কোটি ডলার করে পাঠিয়েছেন।

গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে প্রতি মাসেই ২০০ কোটি ডলার বা তার বেশি প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। এছাড়া, জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ শতাংশ বেড়েছিল।

সব মিলিয়ে, চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্রবাসীরা দেশে ১ হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্রবাসী আয় ছিল ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার।

প্রবাসী আয় দেশের ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় না, বা কোনো ঋণ পরিশোধ করতে হয় না। তবে রপ্তানি আয়ের মাধ্যমে দেশের ভিতরে ডলার প্রবাহিত হলেও, তা কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ব্যবহার হয়, যার জন্য আবার বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয়। বিদেশি ঋণ পরিশোধের জন্যও ডলারের প্রয়োজন হয়। সুতরাং, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি হলে দেশে ডলারের মজুত দ্রুত বেড়ে যায়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।