“ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে হাজারো মানুষের প্রতিবাদ: দ্য গার্ডিয়ান”

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে হাজার হাজার ইসরায়েলি নাগরিক বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভকারীরা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে, তারা দেশের গণতন্ত্রে আঘাত করেছে।

এই বিক্ষোভের কারণে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বন্ধ হয়ে যায়। জেরুজালেম এবং তেল আবিব থেকে পুলিশ অন্তত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, বিক্ষোভের গতি দেখে মনে হচ্ছে, আগামী দিনে আরও বড় বিক্ষোভ হতে পারে।

এ বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, যখন নেতানিয়াহু ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শীর্ষ কর্মকর্তা রোনেন বারকে বরখাস্ত করার চেষ্টা করেন। তবে গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফেলার পর বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখতে বিদেশি সরকারের আহ্বান উপেক্ষা করে ইসরায়েল আকাশ ও স্থলপথে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে গত জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যায়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিনে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় প্রায় ৬০০ জন নিহত হয়েছেন।

বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেছেন যে, সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এবং গাজায় এখনো হামাসের হাতে আটক ৫৯ জনের নিরাপত্তার ব্যাপারে তারা উদাসীন। ধারণা করা হচ্ছে, এই জিম্মিদের মধ্যে ২৪ জন বেঁচে আছেন।

‘ব্রাদার্স ইন আর্মস’ আন্দোলনের প্রধান নির্বাহী ইতান হার্জেল বলেন, “সরকার এখন নিজের স্বার্থে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এবং জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিতে চেষ্টা করছে।” তিনি আরও বলেন, “সরকার কার্যত সব ধরনের বৈধতা হারিয়ে ফেলেছে।”

বুধবার, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জেরুজালেমের মধ্যাঞ্চলে নেতানিয়াহুর সরকারি বাসভবনের কাছের সড়কে অবস্থান নেন। তাদের মধ্যে অনেকের হাতে ছিল পতাকা এবং গাজায় আটকে থাকা মানুষদের সমর্থনে প্ল্যাকার্ড। তারা “এখনই জিম্মি মুক্তির চুক্তি করুন” স্লোগান দিতে থাকেন।

বিক্ষোভের আয়োজকদের মধ্যে একজন ওরা নাকাশ পেলেড, যিনি নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা। তিনি বিক্ষোভে যোগ দিয়ে বলেন, “আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পেরেছি। আমাদের সংগঠিত হতে হবে এবং মূল লক্ষ্য থেকে সরে আসা যাবে না।”

বিক্ষোভকারীরা একযোগভাবে ঘোষণা করেন, “ইসরায়েল তুরস্ক নয়, ইসরায়েল ইরান নয়।” নেতানিয়াহু সরকারের কিছু পদক্ষেপকে তারা ‘ইসরায়েলি গণতন্ত্রের জন্য লাল পতাকা’ বলে উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে ছিল বারকে বরখাস্তের প্রচেষ্টা এবং অ্যাটর্নি জেনারেল গ্যালি বাহারাভ মিয়ারাকে বরখাস্ত করার চেষ্টাও। মিয়ারা সতর্ক করেছেন যে, বারকে বরখাস্ত করা আইনগতভাবে অবৈধ হতে পারে।

ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের আইন বিশেষজ্ঞ আমির ফুচস বলেন, “সরকারের আইনানুগ পদক্ষেপের অধিকার রয়েছে, তবে প্রশাসনিক আইন মেনে চলতে হবে। যদি স্বার্থের সংঘাত দেখা দেয়, সুপ্রিম কোর্ট এটি আটকাতে পারে।”

এদিকে, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতি মামলার তদন্তও চলছে এবং ভবিষ্যতে তাকে কারাদণ্ড হতে পারে। ৭৫ বছর বয়সী এই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ইসরায়েলে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন এবং সম্প্রতি চলমান দুর্নীতির কারণে তিনি আদালতে হাজিরা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।