খুলনার ফুলতলা উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. ফারুক মোল্যা (৪৮) কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার বেজেরডাঙ্গা রেলস্টেশন রোড এলাকায় দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ফেলে রেখে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলেও রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফারুক মোল্যার বাড়ি সদর ইউনিয়নের পয়গ্রামে। তিনি ওই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন এবং একটি নিষিদ্ধ চরমপন্থী দলের সদস্য ছিলেন। ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল তিনি সরকারের সাধারণ ক্ষমার আওতায় আত্মসমর্পণ করেন এবং ৩২ জন চরমপন্থী সদস্যের সঙ্গে পাবনায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। আদালত তাকে দুটি হত্যা মামলায় ৭৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল, তবে তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন।
ফুলতলা থানা সূত্রে জানা যায়, ফারুক মোল্যার নাম নিষিদ্ধ চরমপন্থী সন্ত্রাসী তালিকায় ৫ নম্বরে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৪টি হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি সহ ১৬টি মামলা রয়েছে। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করার সময় পুলিশ তার কাছ থেকে একটি বিদেশি রিভলবার এবং একটি গুলি উদ্ধার করেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ফারুক মোল্যা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন এবং খুলনা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের আস্থাভাজন ছিলেন। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান এবং প্রায় এক মাস আগে তিনি আবার এলাকায় ফিরে আসেন।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে ফারুক মোল্যা উপজেলা পরিষদে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সবার সামনে বলেছিলেন, “আমি এখনো বাঘ, বাঘের মতোই আছি।” পরে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে যান এবং কিছুক্ষণ পর একটি ফোনের পর তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে বেজেরডাঙ্গা রেলস্টেশনের দিকে রওনা হন। পথে দুর্বৃত্তরা তাকে গতিরোধ করে কুপিয়ে আহত করে এবং তার মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় এবং পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকায় নেওয়ার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু পথে তিনি মারা যান।
ফুলতলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুজ্জামান খান এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, হামলার কারণ এখনও জানা যায়নি এবং কেউ অভিযোগ করেনি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।