জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চেয়েছিল পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে, তবে বিএনপি এখনও তার মতামত জানায়নি। দলটি ‘রাষ্ট্র সংস্কার করবে নির্বাচিত সংসদ’—এমন নীতিগত অবস্থান অনুযায়ী তাদের জবাব প্রস্তুত করছে বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের মৌলিক সংস্কারে বিএনপির আপত্তি থাকার কথা নয়। তবে, সংবিধানের মৌলিক সংস্কারে পরিবর্তন হলে নির্বাচনের সময়সীমা বিলম্বিত হতে পারে, এবং সে কারণে বিএনপি ওই ধরনের সংস্কারের প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে না।
৬ মার্চ, ঐকমত্য কমিশন ৩৭টি রাজনৈতিক দলকে পাঁচ সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে মতামত জানাতে একটি স্প্রেডশিট পাঠায়, যেখানে ‘একমত’, ‘একমত নই’ বা ‘আংশিকভাবে একমত’—এই তিনটি বিকল্পে দলের মতামত চাওয়া হয়। ১৩ মার্চের মধ্যে দলগুলোকে তাদের মতামত জানাতে বলা হয়েছিল। মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৫টি দল তাদের মতামত জমা দিয়েছে, এবং বাকিরা সময় চেয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, জাতীয় নাগরিক পার্টি সহ আরও ১৪টি দল তাদের পূর্ণাঙ্গ মতামত আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জমা দিতে পারে।
বিএনপি তাদের আনুষ্ঠানিক মতামত সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করবে এবং সংস্কারের বিষয়ে তাদের বিস্তারিত অবস্থান তুলে ধরবে। এ বিষয়ে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে এবং যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিএনপি বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের পক্ষে বার্তা দিতে চায়।
বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, তারা ২০২৩ সালে ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের প্রস্তাবের আলোকে সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে মতামত প্রস্তুত করছে। তারা আশা করছে, তাদের অবস্থান অন্যান্য মিত্র দলের সঙ্গেও একত্রিত হবে।
বিএনপির নেতারা বলেছেন, নির্বাচন, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের সংস্কারের পক্ষে তারা, তবে সংবিধানে কোনো মৌলিক পরিবর্তন হলে নির্বাচনের সময়ে বিলম্ব হতে পারে, সে কারণে সংবিধানের পরিবর্তন নিয়ে তাদের একমত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তারা মনে করেন, নির্বাচিত সংসদই সংবিধান সংশোধন করবে, এবং নির্বাচন ও প্রশাসনিক সংস্কারের প্রস্তাবগুলোর ওপর জোর দিতে চান।
এদিকে, যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল গণসংহতি আন্দোলনও তাদের মতামত ঐকমত্য কমিশনে জমা দেবে, তবে তারা কিছু বিষয় নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
এছাড়া, বিএনপি কিছু সংস্কার প্রস্তাব যেমন ‘গণপরিষদ নির্বাচন’, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী পদ্ধতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এবং জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন একসঙ্গে করার বিষয়ে মতামত দেবে না। তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে সুপারিশ করবে।
বিএনপি তাদের দলীয় মতামত নিয়ে আলোচনায় বসেছে, এবং শিগগিরই তা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে জমা দেওয়া হবে।