একসময় বাংলাদেশে প্রবাসী আয় সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে আসত। পাশাপাশি, গ্রাহকেরা একবার ব্যবহারযোগ্য পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে ব্যাংক এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রবাসী আয় উত্তোলন করতেন, যা এখনো সম্ভব। সেই সময়ে ডলারের দাম বাজারের ওপর নির্ভর করত এবং খুব বেশি পরিবর্তন হতো না।
২০২২ সালে ডলারের সংকট শুরু হলে, বিদেশে অর্থ স্থানান্তরকারী কিছু প্রতিষ্ঠান গ্রাহক এবং ছোট প্রতিষ্ঠান থেকে প্রবাসী আয় ডলার কিনে দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে দরদাম শুরু করে। এইভাবে, যে ব্যাংক বেশি দাম দিত, তারা প্রাপ্ত ডলার পেয়ে যেত, এবং ডলারের দাম দ্রুত বাড়তে থাকে।
গত আগস্টে নতুন সরকার গঠনের পর, ডলারের দাম ১২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ব্যাংকগুলো এক টাকা পর্যন্ত বেশি দাম দিয়ে ডলার কেনাবেচা করতে পারবে। এর পর থেকে ডলারের দাম নিয়ে যে অস্থিরতা চলছিল, তা অনেকটা স্থির হয়, এবং ব্যাংকগুলো বিদেশি বকেয়া আমদানি দায়ের বড় অংশ পরিশোধ করে দেয়, যার ফলে বৈদেশিক লেনদেনে চাপ কিছুটা কমেছে।
সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, সৌদি আরবের প্রবাসী আয় এখন আর সরাসরি বাংলাদেশে আসছে না, বরং তা দুবাই হয়ে আসছে। একটি অসাধু চক্র সৌদি আরব থেকে প্রবাসী আয় কিনে মজুত করছে এবং বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর কাছে বেশি দামে বিক্রি করছে, ফলে দেশে ডলারের বাজার অস্থির করার চেষ্টা করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি দামে ডলার কিনতে নিষেধ করেছে।
রমজান মাসে সাধারণত প্রবাসীরা তাদের নিকটাত্মীয়দের জন্য বেশি টাকা পাঠান। এর ফলে ব্যাংকগুলো বেশি দাম দিয়ে ডলার কিনে থাকে, এবং প্রবাসী আয় বেড়ে যায়। তবে এই বছর রমজান মাস শুরু হওয়ার পরও ডলারের দাম বাড়েনি, কিন্তু প্রবাসী আয় আগের তুলনায় বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে ডলারের সংকট ছিল, কিন্তু এখন তা নেই। প্রবাসী আয় আরও বেশি আনা সম্ভব, তবে সেজন্য প্রবাসী আয়বান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এতে অবৈধ পথে টাকা আসার পরিমাণ কমে যাবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, রমজান মাসের প্রথম ১৫ দিনে ব্যাংক মাধ্যমে ১৬৬ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ৮১ কোটি এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে ৮৫ কোটি ডলার এসেছে। গত বছরের ঈদুল ফিতরের আগে ৫ দিনে ৪৫ কোটি ডলার এসেছে, অর্থাৎ দিনে গড়ে ৯ কোটি ডলার। তবে এবারের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ১১ কোটি এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ে ১২ কোটি ডলার এসেছে।
এ সময় ইসলামী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক এবং সিটি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রবাসী আয় এসেছে। ব্যাংকগুলোর মতে, প্রতি ডলার কেনার দাম ছিল ১২৩ টাকার মধ্যে, তবে অধিকাংশ ব্যাংক ১২২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১২৩ টাকার মধ্যে ডলার কিনেছে।
বেসরকারি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, “ঈদের কারণে ডলার আসছে বেশি এবং ব্যাংকগুলোর চাহিদাও বেড়েছে। ডলার সরবরাহ বাড়ছে, কারণ ব্যাংকগুলো এই দামেই ডলার কিনছে।”
গত আগস্টের পর থেকে, টানা ৭ মাসে প্রবাসীরা গড়ে ২০০ কোটি ডলারের বেশি পাঠিয়েছেন। চলতি মাসে, প্রবাসী আয় ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। প্রবাসী আয় দেশের ডলার জোগানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস, যা রপ্তানি আয় বা বিদেশি ঋণের বিপরীতে আসা ডলারের চেয়ে সুবিধাজনক, কারণ এর জন্য বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় না এবং কোনো ঋণ পরিশোধ করতে হয় না।