ধীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ মঙ্গলবার যমুনা নদীর ওপর নির্মিত রেলসেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই উপলক্ষে সকাল ১০টায় সেতুর পূর্ব প্রান্তে ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশন প্রাঙ্গণে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি ও জাইকার দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক আইট টেরুইউকি। স্বাগত বক্তব্য দেবেন যমুনা রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান, এবং সমাপনী বক্তব্য দেবেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন থেকে সকাল ১১:২০ মিনিটে উদ্বোধনী ট্রেনে অতিথিরা যমুনা রেলসেতু পার হয়ে সয়দাবাদ রেলস্টেশন পর্যন্ত যাবেন। সয়দাবাদ রেলস্টেশনে ১১:৪০ মিনিটে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, এবং এরপর দুপুর ১২টায় অতিথিরা ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশনে ফিরে আসবেন।
যমুনা রেলসেতু ৫০টি পিলারের ওপর ৪৯টি স্প্যানে নির্মিত, এবং এতে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। বর্তমান সড়ক সেতুর পাশে এই রেলসেতু নির্মিত হয়েছে, এবং এতে দুটি লাইন (ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাক) রয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে একটি লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও আজকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর দুটি লাইনেই অব্যাহতভাবে ট্রেন চলাচল করবে।
যমুনা রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান জানিয়েছেন, নতুন সেতু দিয়ে ট্রেনের যাত্রা সময় কমে যাবে। আগে যমুনা সড়ক সেতু পার হতে ট্রেনের সময় লাগত ২০-২৫ মিনিট, কিন্তু নতুন সেতুতে ট্রেনের সময় কমে ৭ মিনিটের মধ্যে হবে। ফলে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো ছাড়াও যাতায়াতের সময়ও কমবে। পুরোনো যমুনা সড়কসেতুতে আর ট্রেন চলাচল করবে না।
১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর সড়কসেতু চালু হলেও ২০০৬ সালে সেতুতে ফাটল দেখা দিলে ট্রেন চলাচলে সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়। পরে সরকারের উদ্যোগে ২০১৬ সালে নতুন রেলসেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯,৭৩৪ কোটি টাকা ছিল, কিন্তু প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১৬,৭৮০ কোটি টাকায় দাঁড়ায় এবং মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সাল পর্যন্ত করা হয়। এই প্রকল্পের ২৭.৬০ শতাংশ দেশীয় অর্থায়নে, এবং বাকি ৭২.৪০ শতাংশ জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) থেকে অর্থায়ন করা হচ্ছে।
নতুন সেতুর নাম আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু রাখা হলেও, গত বছর ডিসেম্বরে নাম পরিবর্তন করে যমুনা রেলসেতু রাখা হয়। এই সেতুর মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ আরও সহজ ও দ্রুত হবে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৩০টি আন্তনগর এবং ২টি কমিউটার ট্রেন চলাচল করবে।