“চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় রোহিঙ্গাদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার বার্তা”

“চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় রোহিঙ্গাদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার বার্তা” লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করেছেন। এই সময় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উদ্দেশে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য দেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জাতিসংঘ মহাসচিব আপনাদের সাহস দিতে এসেছেন। তিনি শান্তিপূর্ণভাবে আপনাদের দেশে ফিরে যেতে সহায়তা করার জন্য লড়াই করবেন। এটি আমাদের জন্য খুবই আনন্দের ব্যাপার। আজ আমরা সেই আনন্দ অনুভব করছি। আমরা তাঁকে (আন্তোনিও গুতেরেস) ধন্যবাদ জানাই।”

তিনি আরও বলেন, “তাঁকে (আন্তোনিও গুতেরেস) কি কোনো দেশ নিয়ে যেতে পারছে? বনজঙ্গলে ঢুকাতে পারবে? পারবে না। তাঁর কাছে বড় বড় সরকারের কর্তাদের কথা বলা হয়নি, তিনি নিজে কষ্ট করে এসেছেন এবং রোজা রেখে আপনাদের জন্য ইফতার করেছেন।”

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা বারবার তাঁকে (আন্তোনিও গুতেরেস) বোঝানোর চেষ্টা করেছি, ঈদে আমরা সবাই দাদা–দাদির কবর জিয়ারত করি, আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করি। কিন্তু এই মানুষগুলো (রোহিঙ্গা শরণার্থী) এখানে এসে সেই সুযোগ পাচ্ছে না। তাই তাঁকে (আন্তোনিও গুতেরেস) দাওয়াত দিন, যেন তিনি পরবর্তী ঈদে আপনাদের বাড়িতে এসে একত্র হন এবং দাদা–দাদির কবর জিয়ারত করে সম্মান জানাতে পারেন।”

তিনি রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে বলেন, “আমরা এত বড় মানুষ, কিন্তু নিজেদের দেশের বাইরে এসে কীভাবে বেঁচে আছি। আমাদের নিজস্ব সম্পদ আছে, জায়গা–জমি আছে, কিন্তু আমাদের দেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের ছেলেমেয়েরা দাদা–দাদির কবরের পাশে বড় হতে চায়, কিন্তু সেটাও সম্ভব নয়।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা ফিরে যেতে চান, এই খবরটা দুনিয়াব্যাপী পৌঁছাতে হবে। জাতিসংঘের মহাসচিব এই দায়িত্ব নিয়েছেন এবং তিনি এটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছেন।”

আন্তোনিও গুতেরেস তার বক্তব্যে বলেন, “রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে আমি দুটি স্পষ্ট বার্তা পেয়েছি। প্রথমত, আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগণ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। আমাদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গারা আরও ভালো পরিবেশ চায় ক্যাম্পে। দুর্ভাগ্যবশত, অনেক দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, সম্প্রতি মানবিক সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে আমাদের খাবারের রেশন কমাতে হয়েছে। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব, যেন তহবিল সংগ্রহ করা যায় এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ না হয়।”

জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, “আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে জোরালো আওয়াজ তুলব, কারণ রোহিঙ্গাদের সম্মানের সঙ্গে বসবাসের জন্য মানবিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরি।”

উল্লেখ্য, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গতকাল ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর তিনি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে যান। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি, এর মধ্যে ৮ লাখ ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারে সহিংসতার পর আশ্রয় নিয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।