পারমাণবিক আলোচনায় ইরানের পাশে চীন ও রাশিয়া

ইরানের পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা শুরুর আহ্বানের প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে চীন ও রাশিয়া তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। গতকাল শুক্রবার, দেশ দুটি জানিয়েছে যে, শুধুমাত্র পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে এবং ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেই আলোচনা হতে পারে। এই খবরটি ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স নিশ্চিত করেছে।

বেইজিংয়ে আয়োজিত তিন দেশের বৈঠক শেষে চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ঝাওজু বলেছেন, ইরানের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্বের মূল কারণ নির্ধারণে সব পক্ষকে এগিয়ে আসা উচিত। তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞা, চাপ প্রয়োগ বা হুমকি দেওয়ার বদলে আলোচনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, এবং এ ব্যাপারে চীন, রাশিয়া এবং ইরান একমত।

তিনি আরও বলেন, একতরফা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে মস্কো, বেইজিং ও তেহরান একমত হয়েছে। ২০১৫ সালে ইরান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে পারমাণবিক কর্মসূচির সীমাবদ্ধতা আনার জন্য একটি চুক্তি করেছিল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি স্বাক্ষর করেছিল। তবে, ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে বের করে নেন।

বৈঠকের শেষে, চীন ও রাশিয়া এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, ইরান শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনার দাবি জানিয়ে আসছে, এবং তারা এই দাবিকে সমর্থন করে। তারা ইরানের পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার এবং ইরানের এই অধিকারকে সম্মান করার আহ্বান জানায়।

বৈঠকে চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ঝাওজু ছাড়াও রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকোভ এবং ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম ঘারিবাবাদি উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকটি বিশেষভাবে আয়োজিত হয়েছিল, কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন যে, ইরানকে মোকাবিলা করার জন্য দুটি পদ্ধতি রয়েছে—একটি সামরিক শক্তি ব্যবহার এবং অন্যটি চুক্তি মাধ্যমে সমঝোতা।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ট্রাম্পের এই বক্তব্যের জবাবে বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি উপেক্ষা করেন এবং বলেন, “এইভাবে তাদের সঙ্গে সমঝোতা করা সম্ভব নয়।” চলতি সপ্তাহে, ইরান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ছয় সদস্যের একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকের সমালোচনা করেছে, যাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, গ্রিস, পানামা, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ব্রিটেন অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইরান এই বৈঠককে নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

ইরানের সরকার দীর্ঘদিন ধরে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে, তবে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) গত মাসে দাবি করেছে যে, ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের হার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করেছে। যদি এই হার ৯০ শতাংশে পৌঁছায়, তবে তা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। আগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের হার প্রায় ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।