তাপমাত্রা বৃদ্ধি উদ্ভিদের কার্বন শোষণ বন্ধ করে দিতে পারে: নতুন গবেষণা

দীর্ঘদিন ধরে প্রাণী ও উদ্ভিদ বিশ্বব্যাপী পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। তবে, সবকিছুরই একটি সহ্যক্ষমতা সীমাবদ্ধ থাকে, বিশেষ করে উদ্ভিদের। তারা পৃথিবীতে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন মুক্তি দিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, তাপমাত্রা বাড়ানোর ফলে গাছপালা তাদের সহনশীলতা সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে, এবং এর ফলে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

গাছপালা পৃথিবীতে জীবন রক্ষায় অপরিহার্য। সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে তারা কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং তা শক্তিতে রূপান্তরিত করে, পাশাপাশি অক্সিজেন মুক্তি দেয়। গাছগুলো গ্রিনহাউস গ্যাস শোষণ করে এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়ক।

কার্বন শোষণের পাশাপাশি গাছপালা পানির চক্র নিয়ন্ত্রণ করতেও ভূমিকা রাখে। তারা বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ছড়িয়ে দেয়, যা গ্রহকে শীতল রাখতে এবং আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে এই সূক্ষ্ম ভারসাম্য ভেঙে যেতে পারে।

ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞানী ড. শন মাইকেলৎজ এক বিস্ময়কর গবেষণায় দেখেছেন যে, অতিরিক্ত তাপমাত্রা গাছপালার পানি শোষণের ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। গাছপালা তাপের কারণে আরও বেশি পানি হারাতে পারে, যা তাদের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত তাপ গাছপালার কিউটিকল পাতলিয়ে দেয়, ফলে গাছপালা আরও বেশি পানি হারায়। এই প্রক্রিয়া সালোকসংশ্লেষণের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং কার্বন শোষণকে কমিয়ে দিতে পারে। এমনকি, চরম তাপমাত্রায় গাছপালা কার্বন উৎসে পরিণত হতে পারে।

ড. মাইকেলৎজ আরও জানান, গাছপালা অতিরিক্ত তাপে পানি ছড়িয়ে দেয়ার সময় কম কার্বন শোষণ করতে পারে, যা তাদের ভূমিকায় প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে, গাছপালা যদি অত্যধিক তাপমাত্রায় চলে যায়, তবে বন এবং অন্যান্য বাস্তুতন্ত্র কার্বন “সংরক্ষণ” থেকে “নির্গমন” দিকে চলে যেতে পারে, যা জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করবে।

গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে, ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় একটি গাছের মাঝারি আকারের পাতা প্রতিদিন এক চা চামচের প্রায় এক তৃতীয়াংশ পানি হারাতে পারে। এই প্রভাব বনাঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়লে তা বিশ্বের পানি এবং কার্বন চক্রকে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করতে পারে।

প্রচণ্ড তাপে গাছপালা কাজ বন্ধ করে দিতে পারে

সব গাছপালা একভাবে তাপ সহ্য করতে পারে না। কিছু প্রজাতি তাপ সহ্য করতে সক্ষম, অন্যরা তাপমাত্রা বাড়লে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। ভ্যানকুভারে পরিচালিত এক গবেষণায় ২০০ প্রজাতির উদ্ভিদ পরীক্ষা করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০ থেকে ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গাছপালার সালোকসংশ্লেষণ দুর্বল হতে শুরু করে।

গবেষকরা ধারণা করছেন, তাপমাত্রা আরও বাড়লে গাছপালা এক গুরুতর “ব্রেকিং পয়েন্ট”-এ পৌঁছতে পারে। ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উদ্ভিদ আর বেঁচে থাকতে পারে না, কারণ তাদের কোষের প্রোটিন ভেঙে যায়, যা irreparable ক্ষতি এবং শেষে গাছের মৃত্যু ঘটায়। যদিও কিছু মরুভূমি ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উদ্ভিদ চরম তাপ সহ্য করতে বিবর্তিত হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।