জাতীয় নাগরিক পার্টিকে ‘কিংস পার্টি’ বলা হচ্ছে কেন?

বাংলাদেশে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই এটি নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও বিতর্ক। গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের এই দলটি সরকারের সমর্থন পাচ্ছে কি না, এমন প্রশ্ন উঠছে। অনেক রাজনৈতিক নেতা এনসিপিকে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন, যা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।

নেতৃত্বের বিষয়ে বিতর্ক

নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে নাহিদ ইসলাম, যিনি পূর্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন, পদত্যাগ করেন। কিন্তু সমালোচকরা উল্লেখ করেছেন যে, দলের আরও দুজন উপদেষ্টা এখনও সরকারে রয়েছেন, যা সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলছে। এছাড়া, দলের আত্মপ্রকাশের দিন ঢাকায় সমর্থকদের জড়ো করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাড়ি বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এনসিপির প্রতি রাজনৈতিক নেতাদের মতামত

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘নতুন দল গঠনে আমরা স্বাগত জানাই, তবে দলটির নিয়ে মানুষের মধ্যে যে বার্তা গেছে, তা সুখকর নয়।’ তিনি দাবি করেন, এনসিপি সরকারের সমর্থনপুষ্ট দল এবং সরকারি সুবিধা নিয়েই এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এনসিপির প্রতিষ্ঠা নিয়ে সন্দেহ উঠেছে। তারা যে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে, তা না হয় ভাল, কিন্তু তাদের সামনের পথে আরও চ্যালেঞ্জ আসবে।’ তিনি মনে করেন, এনসিপি বর্তমানে সরকারের সমর্থন পাচ্ছে এবং এর ফলস্বরূপ তাদের প্রতিপত্তি বাড়ছে।

গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নূর এনসিপিকে সরাসরি ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে ছাত্রদের প্রভাব রয়েছে এবং তারা বিভিন্ন পদে নিজেদের লোক বসাচ্ছে।

এনসিপি কী বলছে?

নাহিদ ইসলাম, এনসিপির নেতৃবৃন্দের মধ্যে অন্যতম, দাবি করেছেন যে তাদের দল গণঅভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে গঠিত। তিনি বলেন, ‘আমরা ওয়ান-ইলেভেন সময়ের মতো একটি ‘কিংস পার্টি’ গঠন করিনি, আমরা জনগণের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি জানান, সরকারে অংশীদারিত্ব থাকা সত্ত্বেও এনসিপি একটি স্বাধীন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

নতুন দলটির সামনে চ্যালেঞ্জ

এনসিপি বাংলাদেশের রাজনৈতিক চ landscapeে নতুন এক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে, তবে তার সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মতো প্রতিষ্ঠিত দলগুলোর প্রতিযোগিতায় এনসিপির পথটা কঠিন হতে পারে। তবে এই দলের তরুণ নেতৃত্ব এবং গণঅভ্যুত্থানে তাদের ভূমিকা দেশের রাজনীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারে বলে অনেকে আশাবাদী।

অস্তিত্বের ভবিষ্যত

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথম কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে গঠিত গণঅধিকার পরিষদের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন, ‘সরকারি সমর্থন ছাড়া এনসিপির ভবিষ্যত অনিশ্চিত।’ তিনি বলেন, ‘সরকারি সহযোগিতা না থাকলে এই দলটি দাঁড়াবে না।’

এনসিপির নেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে নিচ্ছি এবং আমাদের কাজের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘নারীদের প্রতি অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি আমাদের জনসমর্থন রয়েছে এবং সেটা ধরে রাখার জন্য কাজ করে যাব।’

সংক্ষেপে, এনসিপি যে ধরনের সমর্থন পাচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে দলের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ধারিত হবে। সরকারি সমর্থন ছাড়া তাদের অবস্থান কতটা শক্তিশালী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

One Reply to “জাতীয় নাগরিক পার্টিকে ‘কিংস পার্টি’ বলা হচ্ছে কেন?”

  1. আমরা চাই আমাদের দেশীয় সংরক্ষিত থাকুক আমাদের দেশের মানুষ ভালো থাকুক আমরা তো কোন ঝামেলা চাচ্ছি না। তাহলে কেন নতুন নতুন দল তৈরি হচ্ছে। গিয়েছে সব দেশে মানুষ। আমরা চাই আমাদের দেশ মানুষ নতুনভাবে বাচক। আমরা আর কিছু চাইনা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।