পুতিনের হানিট্র্যাপ কৌশল, ইউরোপজুড়ে সাড়া

হানিট্র্যাপ, বা ‘ভালোবাসার ফাঁদ’, এমন একটি কৌশল যার মাধ্যমে যৌনতার এবং শারীরিক সম্পর্কের প্রলোভন দেখিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এটি সাধারণত রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী বা গোয়েন্দাদের কাছ থেকে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।

এবার, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে এই হানিট্র্যাপ কৌশল ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন জার্মানিতে এই কৌশল ব্যবহার করেছিলেন। সুন্দরী নারীদের মাধ্যমে পুরুষদের প্রলুব্ধ করা হত, তারপর তাদের অপহরণ করে হত্যা করা হত। গত তিন বছর ধরে, রুশ গোয়েন্দারা জার্মানির একটি বিমানঘাটিতে গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছিল এবং সেখান থেকে পাওয়া তথ্য রাশিয়ায় পাচার করেছিল। এখন ধারণা করা হচ্ছে, ব্রিটেনেও রাশিয়ার গুপ্তচর সক্রিয় রয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে সতর্কতা প্রকাশ করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছয়জন বুলগেরিয়ান গুপ্তচর ক্রেমলিনের নির্দেশনায় কাজ করছিলেন। তাদের একটি গুপ্তচরবৃত্তির চক্র ছিল যা গ্রেট ইয়ারমাউথ গেস্টহাউসে অবস্থান করত, এবং তারা স্পর্শকাতর নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহার করত। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের কমান্ডার ডমিনিক মারফি বলেন, রাশিয়া গুপ্তচরবৃত্তির জন্য প্রক্সি এজেন্ট ব্যবহার করছে, এবং এসব এজেন্ট স্যাবোটাজের কাজও করছে।

এছাড়াও, সম্প্রতি কয়েকজন রাশিয়ার এজেন্ট গুপ্তচরবৃত্তির জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বিউটিশিয়ান ভান্যয়া গাবেরোভা (৩০), ডেমোরেটর তিহোমির ইভানচেভ (৩৯) এবং ল্যাব টেকনিশিয়ান ক্যাট্রিন ইভানোভাকে রাশিয়ার পক্ষ থেকে গুপ্তচরবৃত্তি করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাদের সহায়তাকারীদের মধ্যে অরলিন রুসেভ (৪৬), বিসের ডঝামবাজোভ (৪৩), এবং ইভান স্টোয়ানভ (৩২) রয়েছেন, যারা ইতিমধ্যেই অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের অধীনে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।

গোপন তথ্য সংগ্রহের জন্য এই গুপ্তচররা লন্ডন, ভিয়েনা, ভ্যালেন্সিয়া, মন্টেনিগ্রো এবং স্টাটগার্টে তাদের কার্যক্রম চালিয়েছিল। তাদের মধ্যে দুই তরুণীকে বারবার হানিট্র্যাপ হিসেবে ব্যবহার করা হত। এছাড়া, তারা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গুপ্তচরবৃত্তি চালাত।

এই গুপ্তচরচক্রের জন্য পলাতক ব্যবসায়ী জ্যান মারসালেক, যিনি মস্কো থেকে এদের পরিচালনা করতেন, কমপক্ষে দুই লাখ পাউন্ড পাঠিয়েছেন। এছাড়া, রুসেভের সঙ্গে কমপক্ষে ৮০ হাজার ম্যাসেজ বিনিময় হয়েছে। গেস্টহাউসে পাওয়া গেছে বিভিন্ন ধরনের গুপ্তচরবৃত্তি সরঞ্জাম, যেমন পাথরের ভেতর লুকানো ক্যামেরা, আড়িপাতার ডিভাইস, ড্রোন, মোবাইল ফোন, ভুয়া পাসপোর্ট এবং কোকাকোলার বোতলের ভেতর লুকানো ক্যামেরা।

কমান্ডার মারফি বলেন, গত দুই বছরে তিনি এত বড় একটি গুপ্তচর গ্রুপের সন্ধান পাননি। এসব এজেন্ট সরাসরি রাশিয়ার পক্ষে কাজ করছিলেন, এবং তাদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয় যেন কোনো থ্রিলার উপন্যাস পড়ছেন।

এটি এমন এক সময় ঘটেছে যখন রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে এবং ব্রিটেন ও পশ্চিমা মিত্রদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়।

২০১৮ সালে সালিসবারি নোভিচোক গ্যাস হামলার পর, ব্রিটেন রাশিয়ার ২৩ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছিল। সেই সময় থেকেই ব্রিটেন রাশিয়ার গুপ্তচরবৃত্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।