নির্বাচনে বিলম্ব মানবে না বিএনপি

সংস্কারের অজুহাতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করলে তা মেনে নেবে না বিএনপি। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলটি চাইছে, নির্বাচনি সংস্কার শেষ হওয়ার পর দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক এবং চলতি বছরের জুন বা জুলাই মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা হোক। তবে, নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির সংস্কারের দাবির কারণে বিএনপি নির্বাচনে বিলম্বের আশঙ্কা করছে। দলটি নির্বাচনের দাবিতে পবিত্র রমজান শেষে রাজপথে সরব হতে প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেখানে বিভাগীয় সমাবেশসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালন করা হবে। বিএনপির পাশাপাশি তাদের জোট শরিক, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ধর্মভিত্তিক কিছু দলও আন্দোলনে অংশ নেবে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে জেলা পর্যায়ে সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমরা ভোট দিতে পারিনি। নতুন ভোটাররা জীবনে একবারও ভোট দেয়নি- তারা সবাই অপেক্ষা করছে। জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে কোনো ধরনের খেলা চলতে পারে না, তাই অবিলম্বে নির্বাচন হওয়া উচিত। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কারের অজুহাতে নির্বাচন বিলম্বিত করার কোনো সুযোগ নেই, তা বিএনপি মেনে নেবে না।”

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সরকারের প্রতি এক মাসের আলটিমেটাম দিয়েছেন, যাতে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে বলা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে দাবি মেনে না নেওয়া হলে, বিএনপি তাদের জোটসঙ্গীদের সঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের কর্মকাণ্ডে ক্রমশ সন্দেহ তৈরি হচ্ছে এবং সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা হচ্ছে। তারা বলেন, “সরকার নতুন দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত, আর সেজন্যই সরকারপ্রধান বলছেন- ‘কম সংস্কার হলে ডিসেম্বরে ভোট, আর বেশি সংস্কার হলে জুনে ভোট।'”

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “যদি নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সম্ভব। নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি করলে জনগণের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সন্দেহ তৈরি হবে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।”

বিএনপি আরও জানায়, “অপ্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব ও নতুন দল গঠনের বিষয়টি সন্দেহ বাড়াচ্ছে। যারা এসব অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়, তারা বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহলে সন্দেহের সৃষ্টি করছে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “স্থানীয় নির্বাচনের জন্য ১৭ বছর ধরে আমরা আন্দোলন করেছি, আমাদের নেতা-কর্মীরা গুম-খুন ও হামলার শিকার হয়েছে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য। তাই, নির্বাচনে বিলম্ব হলে আমাদের কর্মসূচি আরও জোরদার করতে হবে।”

এছাড়া, বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি একেবারেই গুরুত্ব দেবে না বলে জানিয়েছে, এবং তারা জাতীয় নির্বাচনকেই তাদের পরবর্তী সাংগঠনিক কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।