৬৭৫ টাকায় আমদানি, বাজারে খেজুরের দাম ১,৩০০ টাকা!

বাংলাদেশের বাজারে খেজুর আমদানি ও মূল্য ব্যবধান

বাংলাদেশের বাজারে সবচেয়ে বেশি আমদানি হওয়া খেজুরের মধ্যে ইরাকের জাহিদি খেজুর শীর্ষে রয়েছে। এই খেজুর বস্তা ও কার্টন উভয়ভাবেই আমদানি করা হয়। সাম্প্রতিক আমদানি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত দুই মাসে মোট আমদানি হওয়া খেজুরের ৬৪ শতাংশই ছিল জাহিদি খেজুর। তুলনামূলকভাবে কম দামের কারণে এটি সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়। অন্যদিকে, উচ্চবিত্ত ক্রেতারা মরিয়ম ও মেডজুল জাতের দামি খেজুরের প্রতি বেশি আগ্রহী। তবে, এই খেজুরগুলোর আমদানি ও খুচরা মূল্যের ব্যবধান বেশ বেশি। উদাহরণস্বরূপ, সর্বোচ্চ ৬৭৫ টাকায় আমদানি হওয়া মেডজুল খেজুর খুচরা বাজারে ১,১০০ থেকে ১,৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর ৬৩২ টাকায় আমদানি হওয়া মরিয়ম খেজুরের খুচরা মূল্য ১,১০০ টাকা। এর ফলে খুচরা বাজারে আমদানি মূল্যের চেয়ে দাম ৪৬৮ থেকে ১,১২৫ টাকা পর্যন্ত বেশি রাখা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তারা দামি খেজুরের আমদানিতে কৃত্রিমভাবে কম মূল্য দেখাচ্ছেন।

আমদানি ও বাজার মূল্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর তথ্য অনুযায়ী, কার্টনে আনা জাহিদি খেজুরের আমদানি মূল্য প্রতি কেজি ৮১ সেন্ট বা প্রায় ৯৮ টাকা। খালাসের সময় শুল্ক-কর হিসেবে কেজিপ্রতি ৪৮ টাকা দিতে হচ্ছে, যার ফলে মোট আমদানি ব্যয় দাঁড়ায় ১৪৬ টাকা কেজি। আমদানিকারকেরা পরিবহন ও সংরক্ষণ খরচ যোগ করে এই খেজুর ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায় বিক্রি করছেন, যা খুচরা বাজারে পৌঁছে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে আমদানি মূল্যের তুলনায় খুচরা দামের ব্যবধান প্রতি কেজিতে ১০৪ টাকা।

বস্তায় আমদানি হওয়া জাহিদি খেজুরের শুল্ক-কর কেজিপ্রতি ৩৩ টাকা। এতে করে মোট আমদানি মূল্য দাঁড়ায় ৮৪ টাকা, যা আমদানিকারকেরা ১২২-১২৪ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে খুচরা বাজারে এই খেজুরের দাম ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।

মধ্যম মানের খেজুরের মূল্য বিশ্লেষণ মধ্যম মানের খেজুরের মধ্যে নাগাল, সায়ের এবং দাব্বাস জাতের খেজুর অন্তর্ভুক্ত। এদের আমদানি শুল্ক-কর কেজিপ্রতি ১০০ টাকা এবং গড় আমদানি মূল্য ১৫০ টাকা, ফলে মোট খরচ দাঁড়ায় প্রায় ২৫০ টাকা। তবে, বাজারে এই খেজুর অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, নাগাল খেজুরের আমদানি মূল্য ২৫৯ টাকা হলেও আমদানিকারকেরা এটি ২৬৫-২৮০ টাকায় বিক্রি করছেন এবং খুচরা বাজারে এই খেজুর ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে আমদানি মূল্যের তুলনায় খুচরা দামের ব্যবধান প্রায় ১০০ টাকা।

উন্নতমানের খেজুরের বাজার মূল্য মরিয়ম ও মেডজুল খেজুরের ক্ষেত্রে আমদানি মূল্য ও খুচরা বাজার মূল্যের ব্যবধান আরও বেশি। গত দুই মাসে আমদানি হওয়া ৪.৫ লাখ কেজি মেডজুল খেজুরের গড় আমদানি মূল্য শুল্ক-করসহ ৫২৩ টাকা। সর্বোচ্চ দামে আমদানি হওয়া মেডজুল খেজুরের মূল্য ৬৭৫ টাকা, যা বাজারে ৯০০ থেকে ১,৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে, মরিয়ম খেজুরের গড় আমদানি মূল্য শুল্ক-করসহ ৪০৯ টাকা, সর্বোচ্চ ৬৩২ টাকা। তবে বাজারে এর খুচরা মূল্য ১,১০০ টাকা।

ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া বাজারে খেজুরের দামের এই ব্যবধান সম্পর্কে জানতে চাইলে আমদানিকারকরা জানান, আমদানির শুল্ক-কর, পরিবহন ও সংরক্ষণ খরচ যুক্ত করেই তারা দাম নির্ধারণ করেন। চট্টগ্রামের স্টেশন রোডের ফলমণ্ডি বাজারের আমদানিকারক মোহাম্মদ কামাল জানান, কার্টনে আমদানি করা জাহিদি খেজুর তারা ১৭০-১৭৫ টাকায় বিক্রি করছেন, আর বস্তায় আমদানিকৃত খেজুর ১২২-১২৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে দামের ব্যাপক বৃদ্ধি সম্পর্কে তিনি দায় নিতে নারাজ।

পাইকারি ব্যবসায়ীরাও দাবি করেন যে, তাদের লাভের মার্জিন সীমিত। চট্টগ্রামের ফলমণ্ডির পাইকারি ব্যবসায়ী ইউনুছ হোসাইন জানান, তারা কার্টনে জাহিদি খেজুর ১৮০ টাকায় বিক্রি করছেন এবং বস্তায় আমদানিকৃত খেজুর ১৩২ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন।

অন্যদিকে, খুচরা বিক্রেতারা জানান, কেজি হিসেবে বিক্রি করলে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকায় দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। ফলে কার্টন হিসেবে খেজুর কেনা হলে দাম কিছুটা কম থাকে।

উপসংহার সরকার রোজায় খেজুরের দাম নিয়ন্ত্রণে শুল্ক-কর কমালেও বাজারে তার প্রভাব সীমিত। আমদানি ও খুচরা মূল্যের মধ্যে বিশাল ব্যবধান সাধারণ ক্রেতাদের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর নজরদারি প্রয়োজন, যাতে ক্রেতারা ন্যায্য দামে খেজুর কিনতে পারেন।

One Reply to “৬৭৫ টাকায় আমদানি, বাজারে খেজুরের দাম ১,৩০০ টাকা!”

  1. যদি সামান্য খেজুরের দাম এত বেশি হয় তাহলে মানুষ কি করে খাবে। মানুষকে না খাই মৃত্যুবরণ করতে হবে। খেজুর খাওয়া মহানবী সাঃ এর সুন্নত। আবার বলা হচ্ছে যে রমজান নির্ধারণ করে আবার খিচুড়ির দাম বাড়তে পারে কমতেও পারে। এখন আমাদের কি করনীয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।