“জয়পুরহাটে হাট ইজারায় সিন্ডিকেটের কারসাজি, দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ”

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌর এলাকার বিখ্যাত বালিঘাটা হাটের ইজারায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পৌরসভার অধীনে থাকা এই হাটটি ২ কোটি ৭৪ লাখ ১১ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে, যা গত তিন বছরের গড় ইজারামূল্যের তুলনায় মাত্র দুই লাখ টাকা বেশি।

অন্যদিকে, জয়পুরহাট শহরের নতুনহাট উন্মুক্ত ডাকের মাধ্যমে প্রায় ৯ কোটি টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে, যা গতবারের তুলনায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা বেশি।

২০২৫ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ২০২৬ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত এক বছরের জন্য বালিঘাটা হাটের ইজারা পেয়েছেন আবদুল হাকিম মণ্ডল। অভিযোগ রয়েছে, সিন্ডিকেট করে হাটের ইজারামূল্য বাড়তে দেওয়া হয়নি। প্রায় ৮ কোটি টাকার হাট মাত্র তিন কোটি টাকার কমে ইজারা নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এ প্রক্রিয়ায় গোপনে দেড় কোটি টাকা ভাগাভাগি হয়েছে, যেখানে পাঁচবিবির ইউএনও, পৌর প্রশাসক, পৌরসভা পরিচালনা কমিটির সদস্য, থানার ওসি এবং উপজেলা বিএনপির দুই পক্ষের কয়েকজন নেতা অংশ নিয়েছেন।

হাটের ইজারা অনুমোদনের পরপরই বদলি করা হয়েছে ইউএনও মো. মাহমুদুল হাসানকে, যিনি বর্তমানে জয়পুরহাট জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ওসি কাওছার আলীও বদলি হয়েছেন। তবে, তারা সিন্ডিকেট এবং টাকার ভাগাভাগির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

পাঁচবিবি পৌরসভার বাজার শাখার তথ্যমতে, বালিঘাটা হাট সপ্তাহে দুই দিন, মঙ্গলবার ও শুক্রবার বসে। মঙ্গলবার শুধুমাত্র গবাদিপশুর হাট বসে, যেখানে গড়ে চার থেকে সাড়ে চার হাজার গরু কেনাবেচা হয়। সরকার নির্ধারিত প্রতিটি গরুর হাসিল ৫৫০ টাকা। গতবার হাটটি ২ কোটি ৬৪ লাখ ১৯ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছিল, যা এবছর মাত্র ১০ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

বালিঘাটা হাট ইজারার কাগজপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাতজন দরপত্র কিনলেও মাত্র তিনজন দরপত্র দাখিল করেছেন—পাঁচবিবি উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, আবদুল হাকিম মণ্ডল ও আতাউর রহমান। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে আবদুল হাকিম মণ্ডলকে ইজারা দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আবদুল হাকিম প্রভাবশালী ব্যক্তি। একসময় জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচন করেছেন এবং তাঁর ভাই বিএনপির নেতা। তিনি আগে মেয়রের সঙ্গে আঁতাত করে হাটের ইজারা নিতেন, আর এখন সিন্ডিকেট করে তা নিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক ইউএনও একাই ৪৫ লাখ টাকা ভাগ পেয়েছেন, এছাড়া স্থানীয় বিএনপি নেতারা এবং থানার ওসি টাকার ভাগ পেয়েছেন।

দুই বছর আগে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রের আমলে হাটের কম মূল্যে ইজারা দেওয়া হলে আন্দোলন হয়েছিল। তখন স্থানীয় নাগরিক কমিটি এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ জানিয়ে উচ্চমূল্যে ইজারা দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাঁচবিবি উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, নিয়ম মেনেই হাটটি ইজারা দেওয়া হয়েছে এবং এখানে কোনো সিন্ডিকেট হয়নি। তবে, আবদুল হাকিম মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেড় কোটি টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে হাট নিলে নিয়েছি, এতে সমস্যা কী?’

এদিকে, জয়পুরহাট শহরের নতুনহাট ৮ কোটি ৮৮ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮৮ টাকায় ইজারা পেয়েছেন শামস মতিন নামের এক ব্যক্তি, যেখানে গত বছর ইজারামূল্য ছিল মাত্র ২ কোটি ৩৫ লাখ ২০ হাজার ১১১ টাকা। এবছর ইজারামূল্য একলাফে ৬ কোটি টাকার বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

জয়পুরহাট পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা আবু জাফর মো. রেজা বলেন, হাটবাজার ইজারায় কোনো সিন্ডিকেট হয়নি, বরং উন্মুক্ত ডাকের মাধ্যমে এবার ইজারামূল্য তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলা প্রশাসক আফরোজা আকতার চৌধুরী জানান, নতুনহাটের ইজারামূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও তিনি কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাননি।

Write something…

One Reply to ““জয়পুরহাটে হাট ইজারায় সিন্ডিকেটের কারসাজি, দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ””

  1. অভিযোগ এটা সত্যি না মিথ্যা আমরা জানি না। যদি সত্যি হয় যে কাজটা করেছে তাকে কঠিনতম কঠিন শাস্তি দেওয়া দরকার। যদি কাজটা করে না থাকে তাহলে সন্দেহের জন্য তার কাছে ক্ষমা চাওয়া দরকার।।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।