“‘গণপরিষদ’ ও ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’: জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর মতভিন্নতা সামনে আসছে”

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের সঙ্গে ঐকমত্যের বিষয়গুলি এবং রাজনৈতিক বিতর্ক

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আন্দোলনের ছাত্র নেতৃত্বের সঙ্গে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এবং অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে অনেক বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে, ‘গণপরিষদ’ গঠন এবং ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছাত্র-তরুণদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যে রাজনৈতিক লক্ষ্য প্রকাশ করেছে, সে সম্পর্কে সব পক্ষ একমত নয়।

জামায়াতের অবস্থান

জামায়াত মনে করছে, ‘গণপরিষদ’ এবং ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ সম্পর্কে ছাত্র নেতৃত্ব কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করেনি, ফলে এগুলো বিতর্কের সৃষ্টি করতে পারে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, “তারা কিছু শব্দ ব্যবহার করেছে, কিন্তু এগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সে বিষয়ে কোনো স্পষ্টতা নেই। আমাদের মতে, এখনকার পরিস্থিতিতে এসব বিষয় নতুন বিতর্ক তৈরি করতে পারে এবং নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে।”

ইসলামী আন্দোলনের অবস্থান

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও ‘গণপরিষদ’ এবং ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ গঠনে নীতিগতভাবে একমত। দলটি মনে করে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার নজির রয়েছে এবং এটি সম্ভব হতে পারে। ইসলামী আন্দোলন তাদের প্রস্তাবে সংবিধানের ব্যাপক সংস্কারের পক্ষে, তবে তারা সতর্ক যে, এসব সংস্কারের প্রক্রিয়ায় যাতে নতুন কোনো সংকট সৃষ্টি না হয়। দলটি মনে করে, নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু করতে সংস্কারের প্রয়োজন এবং নির্বাচন হওয়া উচিত সময়মতো।

ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, “বিএনপির প্রভাব দেখে আমরা উদ্বিগ্ন। তারা স্থানীয় নির্বাচন চায় না, সংস্কার চায় না, এবং দ্রুত নির্বাচন চায়। আমরা বলছি, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করা প্রয়োজন।”

জমিয়তের অবস্থান

ধর্মভিত্তিক অন্যান্য দলগুলোর মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ছাত্রদের ‘গণপরিষদ’ এবং ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’-এর মতো তাত্ত্বিক বিষয়ে সম্পৃক্ত হতে চায় না। দলটির মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি জানিয়েছেন, “আমরা চাই, প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হোক এবং ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। আমরা ছাত্রদের সাম্প্রতিক তৎপরতা নিয়ে সতর্ক, তবে তাদের দলীয় অবস্থান রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কিত না হতে হবে।”

নতুন রাজনৈতিক দল এবং বিতর্কের সূচনা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা ‘গণপরিষদ’ গঠন এবং ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ঘোষণা করে একটি নতুন দল গঠন করেছেন, যা রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিএনপির কিছু নেতা মনে করেন, এই চিন্তাভাবনা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করতে পারে এবং রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে নিয়ে যেতে পারে। বিএনপির নেতারা মন্তব্য করেছেন, “এটি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করতে এবং অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে একটি ষড়যন্ত্র হতে পারে।”

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভিন্ন মত

এ বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। তিনি বলেন, “গণপরিষদ এবং সেকেন্ড রিপাবলিক গঠনে নির্বাচন প্রলম্বিত হওয়ার যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, তা আমি বড় সমস্যা মনে করি না। মূল সমস্যা হচ্ছে বর্তমান সরকারের দুর্বলতা। আমূল সংস্কারের মাধ্যমে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনা থেকে দেশকে মুক্ত করতে নির্বাচন কিছুটা বিলম্বিত হলেও তা দেশের স্বার্থে মেনে নেওয়া উচিত।”

এভাবে, ‘গণপরিষদ’ এবং ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ গঠন নিয়ে ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা ও রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তবে সব দলই জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সময়মতো অনুষ্ঠিত করার পক্ষে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।