কোন কথায় রেগে গেলেন জেলেনস্কি, হোয়াইট হাউস বৈঠকে ৪০ মিনিটের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে দেখা করতে যান, তবে তাদের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। বরং, ট্রাম্প এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের সঙ্গে তুমুল তর্কবিতর্কে জড়ান জেলেনস্কি। বৈঠকের মাঝপথেই ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের ওভাল অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়।

এরপর, পূর্বপরিকল্পিত মধ্যাহ্নভোজনও বাতিল হয়ে যায় এবং বহু আলোচিত খনিজ চুক্তি স্থগিত হয়ে যায়। তবে, বৈঠকের এমন পরিণতি কেন ঘটল? কী কথায় রেগে গিয়েছিলেন জেলেনস্কি?

বৈঠকটি প্রায় ৪০ মিনিট স্থায়ী হয়, যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ভাইস প্রেসিডেন্ট ভান্সের বক্তব্যের। মূলত, তাঁর একটি মন্তব্যের পরই উত্তেজনা বেড়ে যায়। বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের সামনে একে অপরকে দোষারোপ করতে থাকেন ট্রাম্প, ভান্স এবং জেলেনস্কি।

বৈঠকের শুরুটা ছিল ভালো। জেলেনস্কি এবং ট্রাম্প একে অপরকে অভিবাদন জানান। এরপর, ভান্স সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে কটাক্ষ করে বলেন, “চার বছর ধরে আমেরিকার এক প্রেসিডেন্ট পুতিনকে নিয়ে কড়া কথা বলেছেন, অথচ পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করলেন। শান্তি এবং উন্নয়নের পথ হল কূটনীতি।”

ভান্সের এই বক্তব্যে জেলেনস্কি বিরক্ত হন এবং বলেন, “পুতিন আমাদের দেশ আক্রমণ করলেন, বড় অংশ দখল করলেন, এবং ২০১৪ সাল থেকেই এই সংঘাত চলছে। বাইডেন, ওবামা বা ট্রাম্প—কেউই পুতিনকে আটকালেন না।”

ভান্স: “আমি সেই কূটনীতির কথা বলছি, যেটা ইউক্রেনের ধ্বংসাবস্থা বন্ধ করবে।”

জেলেনস্কি: “কিন্তু আপনি…?”

ভান্স: “মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আপনি যদি আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের সামনে এভাবে কথা বলেন, আপনি আমাদের অসম্মান করছেন।”

জেলেনস্কি: “যদি আপনি ইউক্রেনে গিয়ে সেখানকার মানুষের সমস্যাগুলো দেখতেন, তাহলে এই কথা বলতেন না।”

ভান্স: “আমি অনেক কিছু দেখেছি। আপনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মানুষের সামনে নিজের বক্তব্য প্রচার করেন।”

এই পর্বের পর বৈঠকের উত্তেজনা বাড়ে। জেলেনস্কি বলেছিলেন, “যুদ্ধের সময় প্রতিটি দেশের নিজস্ব সমস্যা থাকে, কিন্তু আপনি এটা অনুভব করছেন না, তাই সুন্দর সমাধান দিতে চান। ভবিষ্যতে আপনিও এটা অনুভব করবেন।”

এ কথা শোনার পর ট্রাম্পের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তিনি বলেন, “আমরা কী অনুভব করব সেটা আপনি জানাতে পারবেন না। আমরা একটি সমস্যার সমাধান করতে চাই।”

জেলেনস্কি: “আমি তো বলছি না যে আপনি কী অনুভব করবেন, আমি শুধু উত্তর দিতে চেয়েছি…”

ট্রাম্প (চিৎকার করে): “আপনি এই জায়গায় নেই, যে আমাদের কী অনুভব করতে হবে সেটা আপনি জানাবেন!”

এরপর, ট্রাম্প আরও বলেন, “লাখ লাখ মানুষের জীবন নিয়ে আপনি ছিনিমিনি খেলছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন। আমেরিকাকে অপমান করছেন।”

ভান্স: “আপনি একবারও আমাদের ধন্যবাদ দিয়েছেন?”

জেলেনস্কি: “অনেক বার।”

ভান্স: “এই বৈঠকে আমেরিকা আপনার দেশকে সাহায্য করার চেষ্টা করছে, একবারও আপনি ধন্যবাদ জানালেন?”

এরপর, ট্রাম্প বলেন, “আপনার দেশে মানুষ মরছে, আপনি সেনা পাচ্ছেন না, অথচ আপনি যুদ্ধবিরতি চান না!”

এই উত্তেজনাপূর্ণ বৈঠকের শেষে ট্রাম্প চেয়ার ছেড়ে উঠে যান এবং বলেন, “বেশি কথা বলে সমাধান পাওয়া যাবে না।”

পরে ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যমে বলেন, যদি জেলেনস্কি শান্তি চান, তবে আলোচনার জন্য পথ খোলা রয়েছে, তবে তিনি ক্ষমা চাইতে রাজি হননি। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি ক্ষমা চাইবেন না, তবে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের পুনর্গঠন সম্ভব বলে মনে করেন এবং আমেরিকার সাহায্যকেও স্বীকার করেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।