“টিসিবির পণ্য কেনার সময় ক্রেতাদের পাঁচটি প্রধান অভিযোগ”

টিসিবি ট্রাক সেলে নানান অভিযোগ: ভর্তুকি মূল্যের পণ্য নিয়ে সমস্যায় সাধারণ মানুষ

টিসিবি (বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড কমোডিটি কর্পোরেশন) সম্প্রতি ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেছে। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে আবারও এ কার্যক্রম চালু হয়েছে। গত সপ্তাহের সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার, ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ট্রাক সেলের কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন প্রথম আলোর প্রতিবেদক। এ সময় পণ্য বিক্রি নিয়ে ক্রেতাদের বেশ কিছু অভিযোগ উঠে আসে। এ প্রতিবেদনটিতে এসব অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে।

১. ক্রেতার তুলনায় পণ্য কম
টিসিবির ট্রাক থেকে ৫৮৮ টাকা খরচ করে এক ভোক্তা ২ লিটার ভোজ্যতেল (সয়াবিন বা কুঁড়ার তেল), ২ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি চিনি, ২ কেজি ছোলা এবং ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারেন। তবে, প্রতি ট্রাকে মাত্র ২০০ জনের জন্য পণ্য থাকে, অথচ প্রায় প্রতিটি ট্রাকের পেছনে ৩০০-৪০০ মানুষের লাইন দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি আরও বেশি হয় জনবহুল এলাকার মধ্যে।

এদিকে, পণ্য কেনার জন্য ভিড়ের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও অনেকেই পণ্য কিনতে পারেন না। উদাহরণস্বরূপ, ১১ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টার দিকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে টিসিবির ট্রাকের পণ্য শেষ হয়ে যাওয়ার ফলে অন্তত ৫৫ জন ক্রেতা খালি হাতে ফিরে যান। শেওড়াপাড়ায় একই দিন ৩৮ জন ক্রেতা পণ্য কিনতে না পেরে ফিরে গেছেন।

২. স্থান ও সময় সম্পর্কে অবগত না থাকা
টিসিবির নিবন্ধিত ডিলাররা প্রতিদিন ঢাকায় ৫০টি এবং চট্টগ্রামে ২০টি স্থানে পণ্য বিক্রি করেন, তবে পণ্য বিক্রির স্থান প্রতিদিন পরিবর্তন হয়। ফলে অনেক ক্রেতা জানেন না কোথায় পণ্য বিক্রি হচ্ছে, আর লম্বা সময় ধরে ট্রাক খুঁজে বের করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।

টিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, স্থান পরিবর্তন করার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু মানুষ বারবার পণ্য কিনতে না পারেন, যা ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ। কিন্তু বাস্তবে, স্থান পরিবর্তন করেও কিছু মানুষেরা বিভিন্ন স্থানে এসে পণ্য কিনে নেন, এমনকি সেগুলি বাইরে বেশি দামে বিক্রি করে।

৩. টোকেন ছাড়া পণ্য বিক্রি
অনেক ক্ষেত্রেই টিসিবির পরিবেশকরা ক্রেতাদের মধ্যে টোকেন বিতরণ না করে পণ্য বিক্রি করেন। এর ফলে পণ্য পাওয়ার জন্য ক্রেতারা লাইনে শৃঙ্খলা ভেঙে সামনে চলে আসেন, যার ফলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

উদাহরণস্বরূপ, ১১ ফেব্রুয়ারি শেওড়াপাড়ায় টোকেন না দেওয়ার কারণে সুলতানা বেগম নামের এক ক্রেতা চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য কিনতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘টোকেন না দেওয়ার কারণে জানতে পারিনি যে পণ্য পাব কি না। এমন হলে সময়ের অপচয় হয়।’

৪. বিশৃঙ্খলা ও মারামারি
টিসিবির ট্রাকের সামনে বেশ কিছু স্থানে বিশৃঙ্খলা ও মারামারির ঘটনা ঘটে থাকে। বিশেষত নারীদের লাইনে প্রচণ্ড ধাক্কাধাক্কি দেখা যায়। এছাড়া, কিছু অঞ্চলে ক্রেতারা ট্রাক চালক ও সহকারীদের মারধরও করেছেন, যেমন ১৩ ফেব্রুয়ারি মিরপুর-৬ কাঁচাবাজারের সামনে।

৫. খারাপ আচরণ
ক্রেতাদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগও এসেছে। পরিবেশকরা অনেক সময় ক্রেতাদের গালাগাল করেন, কখনও কখনও পানি ছুঁড়ে মারেন বা সজোরে ধাক্কা দেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এমন একটি ঘটনা ঘটে, যেখানে এক পরিবেশক সজোরে ধাক্কা দিলে কিছু ক্রেতা রাস্তায় পড়ে যান।

টিসিবির প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জানান, ‘ক্রেতাদের অভিযোগ আমরা শুনেছি এবং তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে, পণ্যের তুলনায় ক্রেতাদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’

এ ধরনের সমস্যাগুলোর সমাধান প্রয়োজন, যাতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ এবং সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়।

12 Replies to ““টিসিবির পণ্য কেনার সময় ক্রেতাদের পাঁচটি প্রধান অভিযোগ””

  1. সুশৃংখলভাবে সবকিছু সমাধান করা উচিত ।যাতে পরিবেশের কোন ক্ষতি না হয় । এবং চেষ্টা করা উচিত যাতে মধ্যবিয় বা গরিবদের কোন খাবারের সংকট যেন না হয় আশা করছি সকলের তা বোঝার চেষ্টা করবে।

  2. রশিদ ছাড়া পন্য বিএয় বন্ধ করতে হবে। এবং টিসিবির গাড়িতে প্রচুর মালামাল থাকতে হবে।ও টিসিবির সময় ও জায়গা সম্পূকে আগের অনলাইন বা মাইকে যানিয়ে দেওয়া।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।