চার বছর আগের সড়ক দুর্ঘটনায় শারীরিক প্রতিবন্ধী বিল্লাল সরদার টিসিবির ট্রাকের খোঁজে
চার বছর আগে রাজধানীর মগবাজারে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পান বিল্লাল সরদার। সেই দুর্ঘটনায় তিনি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং আর্থিক সংকটে তাকে এখন লাঠিতে ভর দিয়ে চলতে হয়। কিন্তু তবুও, দুই দিন ধরে টিসিবির ট্রাকের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটায় কারওয়ান বাজারে বিল্লাল সরদারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি তখন টিসিবির ট্রাকের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, যেখানে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছিল। গতকাল (সোমবার) থেকে আবার ট্রাকে ভর্তুকি পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। দীর্ঘ এক মাস ৯ দিনের বিরতির পর ঢাকা ও চট্টগ্রামে ফের এই কার্যক্রম শুরু হয়, যার খবর শুনে অনেকেই যেমন বিল্লাল, তেমনি সাধারণ মানুষও ট্রাকের খোঁজে বেরিয়েছেন।
বিল্লাল সরদার জানান, পূর্বে তিনি গাড়ি চালাতেন। তবে দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না। বর্তমানে তিনি রিং রোডের একটি সবজি দোকানে খণ্ডকালীন সহকারী হিসেবে কাজ করেন। গতকাল দুপুরে কাজ শেষে তিনি কারওয়ান বাজারে টিসিবির ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, কিন্তু দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর তিনি পণ্য কিনতে পারেননি, কারণ ট্রাকের পণ্য শেষ হয়ে গিয়েছিল। আজ আবার তিনি লাইনে দাঁড়িয়ে ৩০ মিনিট পর প্রতিবন্ধী হিসেবে অন্যদের সহযোগিতায় পণ্য কিনতে সক্ষম হন এবং বাড়ি ফেরেন।
বিল্লাল জানান, “টিসিবির ট্রাক থেকে দুটি পণ্য সংগ্রহ করলে আমার এক মাস চলে যায়, কিন্তু গত এক মাস ধরে টিসিবির বিক্রি বন্ধ ছিল। তাই কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। এবার বিক্রি শুরু হওয়ার পর লাঠিতে ভর দিয়ে ট্রাক খুঁজেছি।”
টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য বিক্রির বিড়ম্বনা
এদিকে, একজন ভোক্তা টিসিবির ট্রাক থেকে সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা এবং ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারেন। এসব পণ্য কিনতে ৫৮৮ টাকা খরচ হয়, যা বাজারের সাধারণ দাম থেকে অনেক কম।
কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, টিসিবির পণ্য নিতে আসা অধিকাংশ মানুষকেই দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আজ, কারওয়ান বাজারে মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে যখন টিসিবির ট্রাক আসে, তখন মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। এক ঘণ্টার মধ্যে লাইনে দাঁড়ানো মানুষের সংখ্যা ২৫০ জন ছাড়িয়ে যায়, অথচ ট্রাকের পণ্য থাকে মাত্র ২৫০ জনের জন্য। এর ফলে বিক্রি শেষ হওয়ার আগেই অনেকেই খালি হাতে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
এছাড়া, কিছু মানুষ জানিয়েছেন যে তারা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে না পেরে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। যেমন, কহিনুর খাতুন, যিনি সবজি বিক্রি করেন, টিসিবির ট্রাকের পণ্য কিনতে পাঁচ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও তার ৫০০ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
পণ্য না পেয়ে হতাশ বৃদ্ধা
এছাড়া, ৭২ বছর বয়সী ছানোয়ারা, যিনি মগবাজারের চেয়ারম্যান গলির বাসিন্দা, টিসিবির ট্রাকের খোঁজে সকাল ৮টায় বের হয়েছিলেন। তিন ঘণ্টা খুঁজে কারওয়ান বাজারে পৌঁছান, কিন্তু শেষ পর্যন্ত শুধুমাত্র আড়াই কেজি ছোলা কিনতে পারেন। তিনি বলেন, “লাইন থেকে বার বার ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। ট্রাকের পণ্য শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমি কষ্টে ছোলা পেয়েছি। অসুস্থ শরীরে এভাবে পণ্য কেনার জন্য প্রতিদিন ঘুরে বেড়ানো আমাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
এই পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে ছানোয়ারা বলেন, “আমাদের মতো মানুষদের জন্য কম দামে পণ্য কেনা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।”
অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ
টিসিবির মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি একটি বড় সুবিধা হলেও, পণ্যের অভাব এবং দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার ফলে অনেক মানুষই চরম অসুবিধার মধ্যে পড়েন।