চৌদ্দগ্রামে বন্ধুর প্রেমে সহায়তার জন্য স্কুলছাত্রকে পিটুনি, পরবর্তীতে মৃত্যু

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় সহপাঠী বন্ধুর প্রেমে সহায়তা করার অভিযোগে এক কিশোরকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার পর, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে। নিহত কিশোরের নাম মো. আতিক হোসেন (১৭), যিনি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সোনাকাটিয়া আদর্শ গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে এবং স্থানীয় চৌদ্দগ্রাম সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।

গতকাল রাতে সোনাকাটিয়া এলাকায় প্রেমের ঘটনায় জড়িয়ে আতিককে পিটিয়ে আহত করা হয়। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর এলাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে মিছিল করে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত আতিকের সহপাঠী এক কিশোরের সঙ্গে স্থানীয় এক সৌদিপ্রবাসী ব্যক্তির মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের কারণে গত বছরের ১৩ অক্টোবর তারা পালিয়ে বিয়ে করে। এর পর মেয়েটির পরিবার ওই কিশোরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা দায়ের করে, তবে আতিককে আসামি করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, মেয়েটির পরিবার সন্দেহ করে যে, আতিক এই সম্পর্কের মধ্যে সহায়তা করেছিল।

গতকাল রাতে মেয়েটির বাবার নেতৃত্বে কয়েকজন ব্যক্তিরা আতিককে সোনাকাটিয়া এলাকায় পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। পরে তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয় এবং অবস্থার অবনতি হলে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর, চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। তবে আইসিইউ শয্যা না পাওয়ায় আতিকের পরিবার তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়, সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বিকেলে তার মৃত্যু হয়।

আতিকের মৃত্যুর পর এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং এলাকাবাসী মেয়েটির বাড়িতে হামলা করতে চেষ্টা করে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আতিকের বাবা আবদুল মান্নান বলেছেন, “আমার ছেলেকে কোনোভাবে জড়িত না হয়েও মিথ্যা অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছেলে তার সহপাঠীর প্রেমের ঘটনায় কোনো অংশ নেননি। সে শুধু তার বন্ধু হিসেবে সহায়তা করেছিল। আমি হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।”

ঘটনার পর মেয়েটির পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ জানান, প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে পূর্ববিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা ঘটনায় জড়িতদের আটক করার চেষ্টা করছি এবং পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।