“সিরামিক শিল্প মালিকদের গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি”

দেশীয় সিরামিক শিল্পের মালিকরা সিরামিকশিল্পের সুরক্ষা এবং উন্নয়নের জন্য নতুন করে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। তারা একই সঙ্গে গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার এবং সিরামিক টাইলস ও স্যানিটারি পণ্যের ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের দাবি করেছেন।

আজ সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মইনুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিসিএমইএর উপদেষ্টা এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, সহসভাপতি মো. মামুনুর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন, সহসভাপতি আবদুল হাকিম, এবং পরিচালক রাশীদ মাইমুনুল ইসলাম ও ফারিয়ান ইউসুফ।

লিখিত বক্তব্যে মইনুল ইসলাম জানান, সিরামিক শিল্প একটি গ্যাস নির্ভর শিল্প এবং গ্যাসকে এই শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল হিসেবে গণ্য করা হয়। সিরামিক পণ্য উৎপাদনের জন্য কারখানায় নির্দিষ্ট চাপের গ্যাসের সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি। বিশেষত, নির্দিষ্ট চাপের গ্যাসের অভাব হলে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় থাকা সব পণ্য তৎক্ষণাৎ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। গ্যাসের অভাবে গত কয়েক বছরে অনেক দেশীয় সিরামিক প্রতিষ্ঠান বিশ্ববাজারে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পেরে বড় বড় কোম্পানির অর্ডার বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বর্তমানে সিরামিক টাইলস ও স্যানিটারি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপিত রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, সিরামিক পণ্য এখন আর বিলাসিতার জিনিস নয়, তাই এই শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করা উচিত।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত এক বছরে ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী এবং ময়মনসিংহের ২২ থেকে ২৫টি সিরামিক কারখানায় গ্যাসের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যেখানে গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসআই হওয়া প্রয়োজন, সেখানে তা কখনো কখনো ২-৩ পিএসআই বা শূন্যের কোঠায় নেমে যাচ্ছে, যার ফলে দৈনিক প্রায় ২০ কোটি টাকার উৎপাদন ক্ষতি হচ্ছে।

বিসিএমইএ জানায়, গ্যাসের অভাবে প্রায় ৫০টি সিরামিক কোম্পানি তাদের বিনিয়োগ স্থগিত করেছে এবং নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত পাঁচটি কারখানা উৎপাদন শুরু করতে পারছে না। এতে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থানের সুযোগও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

মইনুল ইসলাম আরও জানান, গত ৯ বছরে শিল্প খাতে গ্যাসের দাম ৩৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২৩ সালে মাত্র এক বছরে ১৫০ শতাংশ দাম বেড়েছে। এর ফলে সিরামিক পণ্যের উৎপাদন খরচ ১৮ থেকে ২০ শতাংশ বেড়ে গেছে, কিন্তু দাম বাড়ানোর সুযোগ না থাকায় ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। সম্প্রতি জানা গেছে, সরকার গ্যাসের দাম আরেক দফা ১৫২ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে, যা সিরামিক শিল্পকে আরও সংকটে ফেলবে।

বিসিএমইএর সভাপতি বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি শিল্পের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হবে এবং বর্তমান গ্যাস সরবরাহের সংকটের মধ্যে দাম বৃদ্ধির ফলে শিল্পটি ধীরে ধীরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। এতে শ্রমিক ছাঁটাই হবে, বেকারত্ব বাড়বে এবং ঋণখেলাপির হারও বেড়ে যাবে, যা সরকারের শিল্পবান্ধব নীতির বিপক্ষে যাবে।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন মন্তব্য করেন, ব্যবসার খরচ বাড়ছে, যা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে, অন্যথায় শিল্প খাত প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।